আজ জন ফিরে যাচ্ছে । এই দিয়ে ও তৃতীয়বার এসেছে এই ছোট্ট গ্রাম সুদামপুরে সুদূর আমেরিকা থেকে । জনার্দনের এখানে একটা ছোটো দোকান আছে । একমাত্র ছেলে রথীন্দ্রকে অনেক কষ্টে পড়াশোনা করিয়েছিল । তবে ও মেধাবী ছিল , পরিশ্রমী ছিল , সাইকেল করে স্কুল যেত , বৃত্তি পেতো ,তাই সবাই ওকে ভালবাসতো । তারপর শহরের কলেজে গেল , সেখানেও ভাল ফল করে কিভাবে যেন আমেরিকা চলে গেল । এরপর সামান্য যোগাযোগ রাখতো , মাঝেমধ্যে টাকা পাঠাতো আর শুধু একবার মাত্র এসেছিল । রথীন্দ্র ওখানে এক মেম বিয়ে করে । জন ওদের…
Read MoreTag: bangla golpo
আজ হোলি খেলব শ্যাম
উতলিকা হাউজিং কমপ্লেক্সের চল্লিশতম তলার ব্যালকনিতে বসে শ্যামলবাবু অতীতে হারিয়ে গেলেন এক দোলের দিনে। এখনকার ছেলে-মেয়েরা তো দোল খেলতেই জানে না। মেজো মেয়ে অরূণিমা গত পরশু এসেছে। সঙ্গে এসেছে বারো বছরের নাতি পাপ্পু। আবিরের বাটিটা হাতে নিয়ে শ্যামলবাবু ডাকলেন পাপ্পুকে, এই পাপ্পু, আয় একটু কাছে, তোকে একটু রঙ মাখিয়ে দিই।সে তো কিছুতেই রঙ মাখতে চায় না। বলে, না দাদু রঙ দিও না, মা বকবেন, রঙ মাখলে শরীর খারাপ করবে। শ্যামলবাবুর মনে পড়ে যায় ছোট বেলার কথা। তখনকার দিনে মা বাবারা এমন ভাবে ছেলেমেয়েদের তুতুবুতু করে রাখতেন না। বেলা আটটা নটা…
Read Moreরকেট
এই যে সেদিন পুরোনো কবিতাটা মনে পড়েগেলো , “আই শ্যাল বি ব্যাক এগেইন জাস্ট বিসাইড দা প্যাডি স্টেয়ারস”। এটাও মনে পড়ে যায় যে, এটার সঙ্গে আমার চাঁদে রকেট পাঠানোর ও একটা সম্পর্ক ছিল। প্রফেসর শঙ্কুর মতো ডাইরীর ডেট উল্লেখ করে বলা সম্ভব নয়। কিন্তু এটা বলতে পারি , প্রায় ৩০ বছর আগের ঘটনা তো হবেই, বসে আঁকো প্রতিযোগিতা হয়েছিল কোনো এক দূর্গা পুজোর প্যান্ডেলে। হিজি বিজি ছবি এঁকে প্রথম পুরস্কার নিয়ে এলাম ঘরে। একটা বড়োসড়ো বই – মহাকাশে মহামিলন। রাশিয়ানরা তখন মুড়ি মুড়কির মতো রকেট, কুকুর যা পারছে তাই ছুড়ছে…
Read Moreএকটু দেরী হয়ে গিয়েছিল
সখ ছিল তোর , এলো চুলে অস্তমিত সূর্যের আলো-আঁধারিতে দেখবি আমায় পশ্চিমের বারান্দায় দাঁড়িয়ে তোর অপেক্ষায় …… পড়ন্ত বিকেলের সোনা রোদ যখন জানলার নীল কাঁচ ভেদ করে গায়ে এসে পড়ল মনে পড়ে গেল সে কথা ….. মনে পড়ে গেল – সূর্যোদয়ের রঙ গায়ে মেখে সমুদ্র সৈকত চলতে চলতে আমায় জানিয়ে ছিলি তোর ইচ্ছের কথা ……… বলেছিলালম – আজই নয় কেন — সূর্যাস্তের বেলায় এসে দাঁড়াব এই সৈকতে – দেখবি দু-চোখ ভরে …… বলেছিলি না — ঐ পশ্চিমের বারান্দা – সূর্যাস্ত আর সেই সময়ের এলো চুলে দাঁড়ানোই তোর চাই …… সময়ের…
Read Moreসাহস
আমার দিদার মা নিভাননী ছিলেন অতি সাহসী মহিলা। ছয় ছেলেমেয়ে নিয়ে তার বিরাট সংসার, স্বামী থাকেন দূরে। তার ক্ষেত খামারে যে সব মুনিস, রাখাল, বাগাল সারাদিন ধরে কাজকর্ম করত, তারাই আবার সুযোগ বুঝে মালিকের বাড়ীতে চুরিও করত। একদিন, গরমের রাত। নিভাননী, তার শোবার আগে, সমস্ত ঘরগুলিতে নজরদারি চালিয়ে নিয়েছেন, সিঁড়ির কোণাগুলো, সিঁড়ির নীচে ইত্যাদি সব জায়গায়। তারপর উনি যখন অভ্যাস মত তার পা দুটো খাটের পাশে রাখা পাপোশে মুছে, ছোটো সিঁড়ি দিয়ে বিশাল উঁচু পালঙ্কে উঠতে যাবেন, দেখেন, আলনার জামা কাপড়ের আড়ালে ও খাটের পাশে একটা মিশকালো শুঁটকো লোক পিছন…
Read Moreবিচার
সমস্ত কোর্ট চত্বর লোকে লোকারণ্য ।আজ যে কেসের রায় ঘোষণা হবে, তেমন কেস আগে বোধহয় কখনও আসেনি বর্ধমানের মত কোর্টে ।চামেলি – প্রস্টিটিউট ;খুন করেছে নিজের ১৭ বছরের ছেলেকে ।এ এক অদ্ভুত কেস।অথচ সে নিজেই এসে আত্মসমর্পণ করে পুলিশের কাছে ।আজ অবধি কোনো উকিল নিয়োগ করে নি নিজের জন্য, দেয় নি কোনো আত্মসমর্থনে যুক্তি ।সবাই বুঝছে, চামেলির ফাঁসির সাজা ঘোষণা হবে ;তবু কৌতূহল – কেন করল।হাজারো মানুষের হাজার মতামত ।যথা সময়ে শুরু হল কোর্টের কাজ ।আজও নীরব চামেলি ।ভিড়ের মধ্যে থেকে ছিটকে আসে এক মহিলা -গালাগালের ফোয়ারা ছুটিয়ে। -“হারামজাদী, বারোভাতারি…
Read Moreনরেন ফুচকাওয়ালা
পড়াশোনায় খুব ভালো না হলেও, কথায় বার্তায় আদব কায়দায় ও চালচলনে সবার প্রিয় নরেন। স্কুলে সবাই তাকে কবি বলে ডাকত, কারণ স্কুলে ওয়াল ম্যাগ্যাজিনে সবচেয়ে ভালো কবিতাটা নরেনেরই থাকত, তাছাড়া স্কুলে স্বরচিত কবিতা প্রতিযোগিতায় নরেন সব বারই প্রথম হত। ছোট থেকেই তার ইচ্ছে, একদিন সে মস্ত এক কবি হবে, বইয়ের পাতায় পাতায় থাকবে তার কবিতা। বাবা মা, স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকা থেকে পাড়ার সবাই নরেনকে খুব ভালোবাসে। মানুষের বিপদে আপদে, সময়ে অসময়ে নরেন সবসময় তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করে। গরিব চাষির ছেলে নরেন, ইচ্ছে না থাকলে ও উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে…
Read Moreরিকশাকাকু
বড্ড দেরী হয়ে গেছে আজ, পাক্কা এগারোটায় S.M.-এর ক্লাস। ঠিক সময়ে পৌঁছতে না পারলে ম্যাম দেবেন একখান মোক্ষম প্র্যাকটিকাল ওয়র্ক।তারপরে না পারলে সোজা ক্লাসের বাইরে।হ্যাঁ,ঠিক স্কুলের মতো।স্কুলের থেকেও যেন এখানে বেশী ভয় লাগে সবার। তারপর মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা একটাও রিকশা,টোটো বা অটো কিছুই যাচ্ছে না এদিক দিয়ে। কোনোরকমে একটা রিকশা পেয়েই তাতে চটপট উঠে বসলো বাবনু।বাবনু জুলজি অনার্স নিয়ে সেকেন্ড ইয়ারে উঠলো এইবারে। বাবনু রিকশায় ওঠবার আগেই একটি মাঝবয়সী ভদ্রলোক আগে থেকেই রিকশায় বসেছিলেন। বাবনু তাড়াহুড়োতে ব্যাগ থেকে ৫ টাকার খুচরো বের করতে যাচ্ছিলো। মাঝবয়সী ভদ্রলোকটি বাবনুকে বললেন যে ও…
Read Moreরং নাম্বার
-হ্যাঁ রিমি, তুই কোথায়? এখনো পৌঁছাস নি, বস তো রেগে আগুন।-আপনি কে বলুন তো? -দেখ এটা কিন্তু মজা করার সময় নয়, জানিস তো তুই আজ মিঃ গুপ্তা রা আসছেন আর তুই না থাকলে হবে কি করে! এই মিটিংটাই কিন্তু তোর প্রমোশনের জন্য এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে। -আপনি তো অদ্ভুত মানুষ মশাই, কে আপনি। শুনুন এটা কোনো রিমির নম্বর নয়। নেক্সট টাইম ফোন করে আর ডিস্টার্ব করবেন না। -হ্যালো!হ্যালো! কি রে কথা বল। যা ফোনটা কেটে দিল! আর এক বার কল করি। -কতোবার বলবো বলুন তো এটা কোনো রিমি টিমির…
Read Moreগল্পের মত সত্যি
মেয়েটার বিয়ে বেরিয়ে গেল ফুলে সাজানো গাড়িটাতে ।বাড়িটা একেবারে শূন্য হয়ে গেল ।কবে যে ফুটফুটে পরীটা এত বড় হয়ে গেছে, বুঝতেই পারে নি কৌশিক ।সব কিছু মনে হচ্ছে এই ক’দিন আগের ঘটনা ।এই তো সেদিন দোলন আর মোমকে নিয়ে কলকাতা ছেড়ে এই পাহাড়ের দেশে চলে আসা, বরাবরের মত ।নিজের জন্য, দোলনের জন্যও – মোমকে অবলম্বন করে এলোমেলো হয়ে যাওয়া জীবনটা আবার নতুন করে শুরু করার স্বপ্ন নিয়ে ।সেই ছোট্ট মোম আজ সব শূণ্য করে দিয়ে চলে গেল । আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিন্ন হয়েছে বহু কাল ।এখানের কিছু লোকজনই ছিলেন…
Read More