গত বছর শীতের শেষ হয়ে বসন্ত আসি আসি করছে – এমন একটা পড়ন্ত দুপুরের দিকে অপরাজিতার বাড়িতে বেহায়া কোকিলের মতো একটানা ল্যান্ডফোনটা বেজেই যাচ্ছিল ।মধ্যবয়সী মহিলাটি বাড়িতে একা – আলগা ভাতঘুমে আচ্ছন্ন ছিলেন ।চমক ভেঙে পড়িমড়ি করে ফোনটা ধরতেই অচেনা এক কণ্ঠ ঘোষণা করেছিল নিতান্ত এক দুঃসংবাদ ।অপরাজিতা দাশগুপ্ত পথ দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম অবস্থায় রিকভার নার্সিংহোমে অ্যাভমিটেড ।বলাই বাহুল্য, মধ্যবয়সী মহিলাটি অপরাজিতা দাশগুপ্তের মা ।তারপর….. ?!!!
তারপর নার্সিংহোমে পৌঁছে দেখা গেল অপরাজিতা তখনও সেন্সলেস ।মাথায় আঘাত গুরুতর ।রক্ত দিতে হয়েছে ।জীবনের আশঙ্কা নেই ।
কে এই দেবদূত – যিনি দুর্ঘটনাস্থল থেকে নার্সিংহোমে নিয়ে এসেছেন, রক্ত জোগাড় করে দিয়েছেন, বাড়িতে খবর দিয়েছেন?! তিনি বিখ্যাত চিত্রশিল্পী ভাস্কর চক্রবর্তী ।বড় মাপের মানুষ, বড় মনের মানুষ – স্বীকৃত হলেন সমাজে পুনরায় ।
এরপরের গল্প অতি সাধারণ ।ভাস্কর চক্রবর্তী বারবার খোঁজ নিতেন অপরাজিতার ।পাষাণ প্রতিমা একদিন গলে গেল সূর্যের স্পর্শে ।উজাড় করে দিল তার কলঙ্ক – তার জীবনের অভিশাপ ।সে কখনও মা হতে পারবে না – এই অপরাধে ভালোবাসার মানুষ তাঁকে ত্যাগ করেছে ।মা – বাবা স্বামী পরিত্যক্তা মেয়েকে নিয়ে লজ্জিত ।সেদিন সে মরতে চেয়েছিল….. ।।
মানুষ মাত্রই অবলম্বন চায় ।অপরাজিতা ক্রমশ আঁকড়ে ধরে ভাস্করকে – অন্ধকার জীবনের সূর্যকে ।ভাস্করের হাত ধরে সে নতুন করে আঁকা শুরু করে ।তাঁর সৃষ্টি হয়ে উঠেছিল তার সন্তান ।গভীর থেকে গভীরতর হয়েছিল সম্পর্ক ।সবার বারণ সত্ত্বেও শরীর মনের সবটুকু উজাড় করে তার সূর্য পূজার নৈবেদ্য সাজিয়েছিল অপরাজিতা ।ভাস্কর যে তাকে বিশ্বাস করতে শিখিয়েছিল -” অপ্রত্যাশিতকে প্রত্যাশা করাই জীবন “…!!
নাহ, বন্ধনের প্রতিশ্রুতি ছিল না সে দেবদূতের আশ্বাস বাণীতে।পূজার নৈবেদ্য গ্রহণের শেষে বিসর্জনই বোধহয় অনিবার্য পরিণতি ।ভাস্কর চক্রবর্তী বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন তাঁর কর্মসূত্রের সাফল্যের ভিত্তিতে ।আরো বেশি আরো বেশি উজ্জ্বল হবে ভাস্করের জ্যোতি ।অপরাজিতাকে দিয়ে গেছেন চিরস্থায়ী স্মৃতিভার – মারণ ব্যাধি এইডস – পূজার নৈবেদ্য গ্রহণের প্রতিদানস্বরূপ ।
….. অপরাজিতা এখন মৃত্যুকে ভয় পায় – ভীষণ রকম বাঁচতে চায়……… অপ্রত্যাশিতকে প্রত্যাশা করে প্রতি মুহূর্তে…..