দৃশ্য – ১
রাত ১০ টা বাজে। এখনও তুতাম ঘরে এল না। রাখীর বুকটা ধুকপুক করছে। প্রেসারটা এমনিতেই বেড়েছে গত বছর থেকে। অর্চন আগে বাড়ি ঢুকে পড়লে সেই রোজকার এক অশান্তি। সেদিন রমাবৌদি কথায় কথায় জানিয়ে দিল, পাড়ার সবাই নাকি আমাদের বাড়ির অশান্তি নিয়ে অত্যন্ত বিরক্ত।……ছিঃ ছিঃ! মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করছিল রাখীর। সে নিজেও বোঝে ‘দত্ত-বাড়ি’ পাড়ায় মার্কামারা হয়ে গেছে। সত্যি! কয়েকবছর ধরে কি যে হচ্ছে তার সংসারে …… এমনটা তো আগে ছিল না। স্মৃতির কোঠায় ঠোক্কর দিয়ে ভাবতে লাগল রাখী… কবে থেকে , কেন এইরকম হতে শুরু করল …
ঠিক সেই সময় কলিং বেল এর টুংটাং। বাবা–না-ছেলে …একরাশ আশঙ্কা নিয়ে দরজা খুলল রাখী, সামনে তুতাম। দীর্ঘশ্বাস ফেলতে কয়েক সেকেন্ড দাঁড়িয়ে ছিল দরজার সামনে – ছেলের ধাক্কায় একটা জোর ব্যাথা লাগল হাতে। মায়ের কাতর “আঃ” তুতাম গ্রাহ্যই করল না। নিজের ঘরে গিয়ে দাম করে দরজা বন্ধ করে দিল। সোফায় বসে রাখী নিঃশব্দে হাউহাউ কান্না শুরু করতেই আবার কলিংবেল।এবার অর্চন। অভিনয় শুরু। চোখের জল ঝটপট মুছে হাসি মুখে দরজা খোলে রাখী।
-তুতাম ফিরেছে ?
– হ্যাঁ , অনেকক্ষন।
দৃশ্য – ২
দুবার ফোনটা বেজে গেল। এরকম তো হওয়ার কথা নয়। বেলাকে তো বলেই রাখা আছে বাথরুমে গেলেও ফোনটা নিয়ে যাবার জন্য। দুপুর বেলা পাশের বাড়িতে ফোন করতে ইচ্ছে করল না, সবাই ঘুমোয় এই সময়। আবার ফোন করল রাখী, এবার বেলা ধরল – উৎকণ্ঠা উচ্চ:স্বর ধারণ করেছে ……
-কোথায় ছিলি এতক্ষন?
-ভাই বমি করেছিল বৌদি, পরিস্কার করছিলাম গো।
-কেন রে? কি খেয়েছে?
-দুপুরে ভাত খেয়েই পুরোটা ভাত তুলে দিলো…… গা টাও একটু গরম।
রাখী আর দেরী করে নি। প্রিন্সিপ্যাল কে বলে ছুটে বাড়ি চলে এল। রাস্তায় ভাবছিল, নাঃ চাকরিটা ছেড়েই দেবে।
নিজের হাতে অতি যত্নে বড় করেছে তুতামকে সে। স্কুলে দিয়ে আসা, নিয়ে আসা, তুতামের জামা, তুতামের ড্রয়িং পেন্সিল, তুতামের পছন্দের খাবার, তুতামের গল্পের বই, তুতামের ওয়ার্কশীট, তুতামের কার্টুন শো, তুতামের হাসি-কান্না-রাগ-অভিমান দিয়ে সে তার নতুন জগৎ তৈরি করে নিয়েছে আজ।সে নিশ্চিত, তার মতন তুতামকে কেউ বুঝতে পারে না …… তার মতন কেউ তুতামের খেয়ালও রাখতে পারে না। অর্চন খুব বলেছিল, স্কুলের চাকরিটা না ছাড়তে …অর্চনকে বুঝিয়েছিল রাখী, তুতামের তাকে কত প্রয়োজন। জীবনে ভালো মন্দ বোঝার জন্য মায়ের সান্নিধ্যের গুরুত্ব কতখানি … অর্চন তর্ক করা ছেড়ে দিয়েছিল এক সময়। রাখী শুধু সতর্ক থাকত, তুতাম এর দোষ গুলো যাতে অর্চনের চোখে না পড়ে। তাই, বাবা আসার আগে, মা-এর বকুনি, পিটুনিগুলো সব শেষ হয়ে যেত তুতামের…… বাবার কাছে সে গুড বয়।
আচ্ছা, দৃশ্যগুলোকে কি চেনা চেনা লাগছে?
এমন ঘটনা কিন্তু সর্বদা সর্বত্র ঘটেই চলছে। অবাধ্য সন্তান এখন প্রতি ঘরে।
একটু অন্যরকম ভাবে ভাবা যাক।আমার ছেলে একদম কথা শোনে না – একটি বহু প্রচলিত বাক্য সর্বত্র বিদ্যমান। আমরা যদি ভাবি, আমরা কেন আমাদের কথা ওদের শোনাতে পারছি না বা কি করলে আমার ছেলেমেয়ে আমার কথা শুনবে? মানে, আমাদের approachটা যদি বদলে ফেলি?
Actually, একটি শিশু যখন জন্মায়, সে থাকে সাদা কাগজের মতন। তার চারপাশ থেকে পাওয়া information আর আমাদের সাথে থেকে উপলব্ধ experience নিয়ে সে বড় হয়ে ওঠে।
তাই, যে শিশুকে এটা করো না, এটা ধরো না, এটা খেও না, এখানে যেও না বলা হয় প্রতিনিয়ত; সে ই কিন্তু বড় হয়ে, আমি করব না, আমি বলব না, আমি পড়ব না, আমি খাব না, আমি যাব না বলে বেশি বেশি।
অর্থাৎ, দেখা গেছে যে, যে শিশু অনেক “না” এর মধ্যে বড় হয়, by default, সে বড় হয়ে তার ব্যবহারের মধ্যে দিয়ে সেই “না” কেই represent করে।
ঠিক কি না?
Actually, আমাদের universe এ “NO” এর কোন image নেই কিন্তু। Natural human psychology “NO”কে attract করে বেশি। যেমন দেখা গেছে, আপনি হয়তো সিগারেট ছাড়তে চাইছেন, নিজেকে রোজ বলছেন – “আমি সিগারেট খাব না”, কিন্তু কিছুতেই সেটা হয়ে উঠছে না। কিন্তু যেই আপনি বলবেন “আমি non-smoker হতে চাই”, দেখবেন, ছেড়ে দেওয়াটা সহজ হয়ে গেছে।
Assertive Communication টা খুব জরুরি।
গান্ধিজী বলে গেছেন,- “না শুন বুড়া, না দেখ বুড়া, না বোল বুড়া” ; কিন্তু উপদেশটা কতটা কাজের? বলি তো সবাই।কিন্তু কাজে আসে কি?
We actually think in images, not in words. And any image, be it positive or negative, if you hold in your mind, it will manifest.
তাই, “বুড়া মাত শুনো” শুনলেই যেই ছবিটা মনে আসে- সেটা হল এমন কিছু, যেটা খুব খারাপ। যা আমি শুনতে চাই না। কারন, “না” বা ইংলিশ শব্দ “NO” doesn’t have any image. কিন্তু আমাদের সবারই খারাপ কিছু শোনার experience আছে। কথাটি আমাদের মধ্যে সেই অভিজ্ঞতাকে মনে করিয়ে দেয়ে।তৈরি হয় এক bad feeling.
So, the prime point of creating something good must be in positive. যেই মুহূর্তে আমি ভাবব “আচ্ছা শুনো” – সেই মুহূর্তে আমি নিশ্চয়ই কিছু ভালো মনে করব যেটা আমি আগে শুনেছি, এবং আমার universe আমায় সাহায্য করবে, আরো কিছু ভালো শুনতে……
তাই, যদি আমরা জীবনে ‘না’ গুলোকে ‘হ্যাঁ’ দিয়ে replace করি, আমরা কিন্তু নিজেরাও life এ অনেক বেশি “হ্যাঁ” experience করতে পারব।
একটা পরিসংখ্যানে দেখা গেছে যে, শিশুরা দিনে average প্রায় ৪০০ বার বড়দের কাছ থেকে ‘না’ শোনে। এতবার “না” শোনাটা can have a number of problematic effects; living kids possibly confused, angry, frustrated and even a negative outlook on the world.
আমরা যদি আমাদের ছোটবেলাটা মনে করি, দেখব যে, এমন অনেক ক্ষেত্রেই হয়েছে যে, বড়দের কাছ থেকে কিছুর জন্য ‘না’ শোনাটাকে আমরা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। ছোটবেলায় আমাকে একবার “আনন্দলোক” পড়তে বারন করা হয়েছিল, আমি কিন্তু লুকিয়ে লুকিয়ে পড়ে নিয়েছিলাম। এমনটা বোধহয় সবার সাথেই ঘটেছে … তাই না?
দৃশ্য – ৩
আজকাল বাড়িটাকে জেলখানা মনে হয় তুতামের। নিজের ইচ্ছেমতন কিচ্ছু করার যো নেই। সবকিছুতেই পারমিশন নিতে হবে। মা, টিভি দেখব ? মা, খেলতে যাব? মা, বিট্টু কে ডাকবো আমার বাড়ি? মা, কেকটা খেয়ে নেব? মা, এখন একটু শুয়ে থাকি? …… পাগল হতে শুধু বাকি তার। খুব খারাপ লাগে তুতামের, যখন মা সবার সাথে তুলনা করে ওর। মা কি সব সময় ঠিক? একদিন না বলে অর্কর বাড়ি গিয়েছিল বলে মা তাকে মিথ্যেবাদী বানিয়ে দিলো, শুধু তাই নয়, অর্কর মা কেও বলে দিলো, আমি যদি যাই ওদের বাড়ি, মা কে যেন ফোন করে জেনে নেয়, বাড়িতে বলে গেছি কি না …… আর নিজে যে বাবা কে সবসময় মিথ্যে কথা বলতে থাকে, সে বেলা? আর বাবা ও তো … সবসময় মা কে বাজে বাজে কথা বলে – সে বেলা? একদিন বাবা র সামনে সব ফাঁস করে দেব, তখন মা মজাটা টের পাবে। বলে দেব বাবা কে, মা আমায় খুন্তি দিয়ে মারে, আমি মায়ের কথা শুনি না… ভালো লাগে না মা কে।
ছোটবেলা্র ভাবনাগুলো জমে জমে young তুতামকে rebel করে তুলেছে। নিজের কিছু ভালো হতে সে দিতে চায় না – তার মন বলে, তার কিছু ভালো হলে, বাবা- মায়ের ভালো লাগবে …… যারা কখনো তার ভালো লাগা-খারাপ লাগা নিয়ে চিন্তাই করে নি।সে ইচ্ছে করে বাড়িতে অশান্তি করে – মা – বাবা ঝগড়াকে সে এখন enjoy করে।
কিন্তু এরকম তো হওয়ার কথা ছিল না; রাখী কত যত্নে, কত আগলে রেখে তুতাম কে “মানুষ” করেছিল…… অর্চন কখনো কার্পণ্য করেনি তুতামের জন্য কিছু করতে। সবচেয়ে ভালো স্কুল, best tutors, দামি ঘড়ি, ব্যাগ – যখন যা চেয়েছে; তাও ছেলে আজ বাঁদর তৈরি হল। রাখীর উপর সব রাগ এসে পড়ে অর্চনের। কখনো কিছু জানতেই দেয় নি,তুতাম কি অসভ্যতামি করেছে। হয়তো ও রাশ টানলে এমনটা হত না।
এই ভাবনাটাও কিন্তু খুব common.
আসলে, আমাদের বড় হওয়াটা বড্ড matter করে।
ছোট বাচ্চারা যখন প্রথম কথা বলতে শেখে, হাঁটতে শেখে – আমাদের প্রবল উৎসাহে তারা কিন্তু আটকে গেলেও বা হোঁচট খেয়ে পড়লেও …… চেষ্টা করে আরও কথা বলবার বা আরেকটু এগিয়ে চলার। কেন ? কারন তাদের encourage করা হচ্ছিল, তারা appreciation পাচ্ছিল তাদের চেষ্টার জন্য।
আমাদের সকলের জীবনে এই appreciationটার বড্ড বেশী দরকার।একটু পিঠ চাপড়ে দিয়ে কিন্তু দেখাই যেতে পারে … ছেলেমেয়েরা কথা শুনছে কি না। এখানেও সেই “YES” will play a great role.
An appreciated child will always be a person who will appreciate others.
কয়েকটা কথা ছোটবেলা থেকে শোনা থাকলে, বড় হয়ে “আচ্ছা শুনো” কে খুব সহজেই register করা যায়।যেমন,
- I love you.
- I am proud of you.
- I am sorry.
- I forgive you.
- I am listening.
- This is your responsibility.
- You’ve got what it takes.
- I will be with you no matter what.
আমরা বড়রা নিজেদের উপর ভরসা করাতে পারলে, ছোটরা নিশ্চয়ই ভরসা রাখতেও শিখবে।মনের ছবিতে “হ্যাঁ” এর প্রাধান্য পরিবেশের “না” কে অবশ্যই ছাপিয়ে যাবে।
Can we change our thought pattern to experience the “Change” with shifting “No”s with lot of “Yes”s ??
Useful write-up. শিরোনাম, ফর্ম, বিষয়বস্তু এবং বিশ্লেষণ, সবদিক দিয়েই প্রশংসনীয়!
Thank You Bouthan!!
Tomar kach theke pawa utsaho egiye cholar sahos deye.
🙂
অসাধারণ লেখা বহু মানুষের কাছে এই লেখা পৌঁছান উচিত.I am inspired very much. বিদ্যুত
Thanks Bidyut Da!!
Very happy to receive your comments. 😀
khub darkari ekta kotha…appreciation darkar sabar jeebon e.ashadharon lekha..
Onek Onek Dhonyobaad !!
Lekhata ekdom onno rokom..khub valo laglo pore..
Thank you Dipannwita 😀
খুব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য কিছু। এর হয়তো কয়েকটা আমারা জানিও। কিন্তু এতো তথ্য দৈনন্দিন জীবনের ভাঁজের সাথে মিলিয়ে যেভাবে বুঝিয়ে বললে, তুমি দিদি…. ইট উইল বি রিয়েলি হেল্পফুল…
খুব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য কিছু। এর হয়তো কয়েকটা আমারা জানিও। কিন্তু এতো তথ্য দৈনন্দিন জীবনের ভাঁজের সাথে মিলিয়ে যেভাবে বুঝিয়ে বললে, তুমি দিদি…. ইট উইল বি রিয়েলি হেল্পফুল…
Anindita, loads of thanks for your appreciation 🙂
Anindita, loads of thanks for your appreciation 🙂