সকাল থেকে সফটি ব্যস্ত, বাড়িতে অনেক কাজ আর মহিলা বলতে ও একা ।স্কুলেও যাচ্ছে না কদিন ধরে।
পুরহিত মশাই আসার আগে সব জোগার জাতি করে ফেলতে হবে।আজ মানির শ্রাদ্ধ। মানি ওর ঠাকুমা।জ্ঞান হবার পর থেকেই সফটি দেখে আসছে মানিই ওর সব। খাওয়ানো ,স্নান করানো, ঘুম পারানো, স্কুলের বাসে তুলে দেওয়া সব ,নাচের শিক্ষিকা খোঁজা ,সব কিছুতে মানি ।কত অত্যাচার না করেছে মানির ওপর, সব মুখ বুজে সহ্য করত মানি।
বাবা মার ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় যখন , তখন সফটির মাত্র ২বছর বয়স , এক আয়া মাসি ছিল আর ভরসা ছিল মানি। বাবা কোন কালেই দায়িত্ববান ছিল না। অর্ধেক দিন বাড়িতেই ফিরত না ।সপ্তাহে একবার হয়ত বাড়ি ফিরত। এইভাবেই কেটে যাচ্ছিল সফটির দিন গুলো,হঠাৎ যে কী হয়ে গেল, সব যেন ওলোট পালোট হয়ে গেল। সফটি যে কি করবে এখন জানে না । বাবা না মা কার কাছে থাকবে সেটাই এখনও অনিশ্চিত। যার কাছেই থাক, মানির মত কেউ ওকে ভালবাসবেন না , এব্যপারে ও নিশ্চিত ।ওর মা তো আবার বোর্ডিং এ রাখবে বলেছিল। বোর্ডিং এ তো আবার খুব শাসনে থাকতে হবে , যখন যা ইচ্ছে করতে পারবে না । কতক্ষণ ধরে ও স্নান করত , টিভি দেখত ,সব বন্ধ হয়ে যাবে, কেন যে মানি চলে গেল ওকে ছেড়ে!
সব কাজ শেষ , পুরহিত মশাইও চলে গেছেন, এই ওর মা এল , বাবার সাথে কথা বলছে ,ও একদম চায় না ,ওর জন্য বাবা মার মধ্যে আবার ঝগড়া হোক, ৯বছর বয়স হয়ে গেল ওর, যখনই বাবা মা কথা বলে ,কিছুক্ষন পর সেটা ঝগড়ায় পরিনত হয়, তারপর মা কাঁদতে কাঁদতে চলে যায়।ওর খুব কষ্ট হয়। ওরও ইচ্ছে করে বাকি সব বাচ্চাদের মত ও ওর বাবা মার হাত ধরে বেড়াতে যাবে , একসাথে থাকবে , খুব মজা কবরে, কিন্তু কখনও হল না এমন।কে জানে আজ কী ডিশিসন হবে! ওর মা দিদা দাদুর সাথে থাকে ।একটা অফিসে চাকরি করে আর খুব ভাল নাচতে পারে। প্রচুর নাচের শো করে। ছোটবেলায় ওকে ছেড়ে মা চলে গেছিল খানিকটা বাবাকে শিক্ষা দেবার জন্য , মা এরকমই বলে সবাইকে, কিন্তু সফটি বুঝতে পারে না বাবাকে শিক্ষা দেবার জন্য মা ওকে কেন ব্যবহার করল ? ওর তো মাকে খুব দরকার হত প্রতিটা মূহুর্তে , খুব মিস্ করত মাকে।এখন তো অনেক বড়ো হয়ে গেছে ,মাকে ছাড়া অভ্যাস হয়ে গেছে থাকাটা।এখন আবার মানিকে ছাড়া থাকাটা অভ্যাস করতে হবে।
মা বেড়ল, বাবার ঘর থেকে,মুখে হাসি লেগে আছে,বাবাও দেখি পেছন পেছন এসে দাঁড়াল।দুজনে এক সাথে বলে উঠল “আজ থেকে আমরা সবাই এক সাথে থাকব”। সফটির বুকটা মোচড় দিয়ে উঠল আর চোখটা কেমন ঝাপসা হয়ে উঠল।
ঝুম্পা দেবী খুব সুন্দর লিখেছেন ছোটবেলার অনেক স্মৃতি চোখের সামনে ভেসে উঠলো । অনেক ধন্যবাদ জানাই এমন সুন্দর লেখার জন্যে।