লাবণ্য নেই এ সংসারে প্রায় দু’বছর, তবু আজ সকালে যখন ফোনটা এল বৃদ্ধাশ্রম থেকে করবীর পায়ের নিচের মাটি সরে গেছিল ।লাবণ্য না থাকলে করবীর এই পৃথিবীতে আর কেউ থাকল না ।নিজের বাবা মা তো সেই কবেই চলে গেছে ।মানুষ হয়েছে দিদার কাছে ।লাবণ্য-ই তো করবীকে পছন্দ করেছিলেন, নিয়ে এসেছিলেন পুত্রবধূ করে ।সে তো কম দিন আগের কথা নয় ।তখন বাবা বেঁচে ছিলেন ।লাবণ্য-ই ছিলেন এই সংসারের সূর্য, তাকে কেন্দ্র করেই চলত রায় পরিবার ।মানসের-ও ক্ষমতা ছিল না মায়ের মুখের উপর কথা বলার । মা-মরা করবী মা পেয়েছিল লাবণ্যের মধ্যে ।শাশুড়ি…
Read MoreTag: bengali story
দশে আট
অনলাইনে ঘড়িটা কেনার পর থেকেই মনটা খুঁতখুঁত করছে, বুবুলের কি সত্যি পছন্দ হবে? অর্ডার দেবার আগে যদিও ছবি দেখিয়েছিল…কিন্তু এখন হাতে পেয়ে দেখছে, বেশ খানিকটা অন্যরকম; একটু বড় ছেলেদের হাতে ভালো লাগবে হয়ত।লাঞ্চ টাইমে জ্যোতিষ্ককে বলেছিল তিয়াসা, আগের ঘড়িটা হারিয়ে যাবার পর কি রকম আপসেট হয়ে পরেছিল বুবুল, খুব পছন্দের ঘড়ি ছিল ওর। জ্যোতিষ্ক তখনই বলে, আজ তিয়াসার সাথে ওর বাড়ি যাবে সে। এর আগে যদিও কয়েকবার গেছে ও তিয়াসার বাড়ি; তিয়াসার বাবা –মা ও পছন্দ করে তাকে। বুবুল কি ভাবে, ঠিক বুঝতে পারে না তিয়াসা। শমিককে ছেড়ে চলে আসার…
Read Moreঅপূর্ণতার পূর্ণতা
– আচ্ছা মিসেস সান্যাল আপনি কি ভেবে চিন্তে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন? পূর্ব পরিচিত গাইনো সার্জন ডাঃ সরকারের কথার উত্তরে অল্প হেসে দিতি সান্যাল বলল-‘ -সম্পূর্ণ সুস্থ মস্তিষ্কে।’ একটু থেমে দিতি আবার বলে ওঠে -১২ বছর আগে লাইগেশন করিয়ে নিয়েছি দ্বিতীয় সন্তান কোলে আসার পর।কিন্তু এখন আমি আবার একটি সন্তানের জন্ম দিতে চাই।সেটা কি সম্ভব? ডাঃ চৌধুরী একটু হেসে,অবাক হয়ে দিতির দিকে তাকিয়ে বললেন, -এখনকার দিনে আবার তৃতীয় সন্তান? তাও আবার দুটি সন্তান সুস্থ স্বাভাবিক থাকার পর!!!! Are you mentally fit madam?? – প্লিজ ডাঃ, আপনি শুধু বলুন লাইগেশনটার কিছু ব্যাবস্থা…
Read Moreসম্পর্ক
জিডি মার্কেটে ঢুকেই রুপসার মনটা আনন্দে নেচে উঠল,কে বলবে ও এক অষ্টাদশী কন্যার জননী! যেন সদ্য কৈশোরে পা দেওয়া কোনও কিশোরি । ওষুধের দোকানের সামনে এসেই মাথাটা গরম হয়ে গেল,দোকান ভর্তি লোক ।প্রায় এক মাস হয়ে গেল দেখেনি ও দীপকে, ভেবেছিল একটু মন ভরে শুধু দেখবে! পনের মিনিট চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল এককোনে,ভিড়টা হাল্কা হতে মনটা একটু খুশি খুশি হল।”একপাতা অ্যালজোলাম দেখি”। দীপ চেনা গলা পেয়ে ক্যাশ গোছাতে গোছাতে জবাব দিল “প্রেশক্রিপশন ছাড়া দেওয়া যাবে না”। তারপর মুচকি হেসে চোখে চোখ রেখে যেন বলার চেষ্টা করল, “কী এমন কষ্ট তোর,যে ঘুমের…
Read Moreখোয়াবনামা।
আদিরাশাহ মা বাপের সঙ্গে ঝগড়া করে তিনহাজার টাকা আদায় করেছে। তারপর গেল সেই মস্ত জুতোর দোকানে। বিদেশী ব্র্যান্ড,এখন এই ছোট্ট শহরেও খুলেছে তার আউটলেট। অনেক অপশন থাকে না,তবুও যা আছে যথেষ্ট। বিষ্টুপুরে ঘুরতে গেলে আদিরা ঐ দোকানটার কাঁচের ওপিঠে নজর ফ্যালে। দেখে এক তন্বী ম্যানিকুইনের সাদা পায়ে লাল স্টিলেটো। লাল দুটি সিল্কের লেস ক্রিসক্রস করে হাঁটু পর্যন্ত বাঁধা। আদিরা ঠোঁট ফুলিয়ে আম্মিকে আব্দার করলো -“খরিদ দিজিয়ে না। ” শায়রা চোখ কপালে তুলে বললো-“ইয়া আল্লাহ । তিনহাজার কি চপ্পল!!বাছা,আমাদের কি সেই হ্যাসিয়ত!” মেয়ে গোঁসা করলো। তাদের দুকামরার ছোট কোয়ার্টারে আঁধার নেমে…
Read Moreইণ্টারভিউ
একটা স্কুল গেট। মাঝখান দিয়ে রাস্তা চলে গেছে। দুই পাশে মাঠ। রাস্তার শেষে তিনতলা বিল্ডিং। রবিবারের সকাল স্কুলটা দেখে পছন্দ হয়ছিল রাহুলের। তাই অনিচ্ছা স্বত্তেও রাহুল তার স্ত্রী রাণুকে নিয়ে হাজির হয়েছিল ইন্টারভিউ দিতে। মেয়ে তিন্নিকে ক্লাস সিক্সে ভর্তি করানোর জন্য। স্কুল গেটের দিকে এগোতেই সিকিউরিটির দিকে চোখ গেল। চোখ যেতেই নিজের মনে ফিক্ করে হেসে নিল রাহুল। এরা যে কি জিনিস যারা সামনা না করেছে তারা ছাড়া কেউ বোঝে না। এমনকি এক বড় কোম্পানির ম্যানেজার রাহুলকেও ঘোল খাইয়ে দিয়েছিল। ক্লাস সিক্সের মেয়েকে নতুন করে সি বি এস ই স্কুলে…
Read Moreবাসন্তীর বাড়ী
“ও, তোমার সেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মহিলা পিওন- সেই বান্ধবী, ওঃ তুমি পারও বটে জোটাতে”। ব্যাঙ্গ ভাবে কথাগুলো বলে অপাঙ্গে দ্যুতির দিকে তাকিয়ে অনি সিগারেট ধরাল।দ্যুতি ভাবলেশহীন মুখে বাঁ কানে নতুন কেনা দুলটা পড়তে পড়তে শান্ত স্বরে উত্তর দিলো, “হ্যাঁ, আমার সাধারণ বান্ধবী পিওন”। বাসে, অটো ও মেট্রো তে যাতায়াত করে আমি যে কত সমৃদ্ধ হয়েছি – কত যে সাধারণ মানুষের সাথে আলাপ হয়েছে, ভালো লাগে আমার, আমি কৃতজ্ঞ যে তোমার গাড়ী আর আমায় অফিসে নামায় না। দ্যুতির এই শান্ত উত্তরে অনি বেশ অবাক হল। খবরের কাগজে চোখ বোলাতে বোলাতে প্রত্যুত্তর…
Read Moreস্বস্তি
একটু আগে কিছু প্রতিবাদী বুর্জোয়াসুলভ বিপ্লবী হুমকির বার্তা সেঁটে গেছে লাল বেদীর ওপর, চলে গেছে তারা; তাঁদের হেঁটে যাওয়া পথে পড়ে রয়েছে আলগোছে ছুঁড়ে দেওয়া আদেশ- “ধর্মঘট সফল করুন;সফল করুন”, এরপর তারা আর হয়তো ফিরে আসবেনা । সে সু্যোগে opposition’ও ফাঁকা মাঠে গোল দিয়ে ক্ষান্ত হয়েছে কিছুটা। সবার সব গাজোয়ারি শেষ, এই মুহুর্তে ফাঁকা পড়ে রয়েছে শুধু সেই লাল বেদিটা। দুটো বেপরোয়া দেহাতি বাচ্চা এসে বসেছে তাতে, এবার তাদের আরাম করে দেড়পয়সার মালাই চেটেপুটে খাওয়ার পালা, যে’ই আসুক সে জায়গা করতে- একচুলও জায়গা ছাড়বেনা তারা। শুধু এটুকু স্বস্তি কাল আর…
Read Moreরক্তবন্ধন
আজ জন ফিরে যাচ্ছে । এই দিয়ে ও তৃতীয়বার এসেছে এই ছোট্ট গ্রাম সুদামপুরে সুদূর আমেরিকা থেকে । জনার্দনের এখানে একটা ছোটো দোকান আছে । একমাত্র ছেলে রথীন্দ্রকে অনেক কষ্টে পড়াশোনা করিয়েছিল । তবে ও মেধাবী ছিল , পরিশ্রমী ছিল , সাইকেল করে স্কুল যেত , বৃত্তি পেতো ,তাই সবাই ওকে ভালবাসতো । তারপর শহরের কলেজে গেল , সেখানেও ভাল ফল করে কিভাবে যেন আমেরিকা চলে গেল । এরপর সামান্য যোগাযোগ রাখতো , মাঝেমধ্যে টাকা পাঠাতো আর শুধু একবার মাত্র এসেছিল । রথীন্দ্র ওখানে এক মেম বিয়ে করে । জন ওদের…
Read Moreআজ হোলি খেলব শ্যাম
উতলিকা হাউজিং কমপ্লেক্সের চল্লিশতম তলার ব্যালকনিতে বসে শ্যামলবাবু অতীতে হারিয়ে গেলেন এক দোলের দিনে। এখনকার ছেলে-মেয়েরা তো দোল খেলতেই জানে না। মেজো মেয়ে অরূণিমা গত পরশু এসেছে। সঙ্গে এসেছে বারো বছরের নাতি পাপ্পু। আবিরের বাটিটা হাতে নিয়ে শ্যামলবাবু ডাকলেন পাপ্পুকে, এই পাপ্পু, আয় একটু কাছে, তোকে একটু রঙ মাখিয়ে দিই।সে তো কিছুতেই রঙ মাখতে চায় না। বলে, না দাদু রঙ দিও না, মা বকবেন, রঙ মাখলে শরীর খারাপ করবে। শ্যামলবাবুর মনে পড়ে যায় ছোট বেলার কথা। তখনকার দিনে মা বাবারা এমন ভাবে ছেলেমেয়েদের তুতুবুতু করে রাখতেন না। বেলা আটটা নটা…
Read More