শারদীয়া – কিছু টুকরো স্মৃতি

পুজো শব্দটার সাথে জড়িয়ে আছে আপামর বাঙ্গালীর সমস্ত আবেগ। অনেক ভালোলাগা, পুরনো স্মৃতি, দেদার আড্ডা, হয়তো কিছুটা বিষাদের ছোঁয়া সবই মিলেমিশে যায় এই আবেগে। যুগ বদলেছে, তার সঙ্গে বদলেছে মানুষের জীবনযাত্রা। সভ্যতার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে মানুষের দৈনন্দিন চাহিদা; তাদের আদব-কায়দা, ফ্যাশন এমনকি খাওয়াদাওয়া। প্রাচ্য-পাশ্চাত্যে আদান প্রদান সংস্কৃতির আঙিনা ছারিয়ে অনেকদিন আগেই ঢুকে পড়েছে আমাদের অন্দর মহলে। এত কিছুর মাঝেও বদলায় নি পুজো নিয়ে মানুষের আবেগ। পুজো নিয়েও আমাদের ধ্যান ধারনার বদল যে হয় নি, তা নয়। সেখানেও অনেক বৈচিত্র এসেছে, জাঁকজমক বেড়েছে। সাবেকি পুজোর সাথে পাল্লা দিয়ে…

Read More

নারায়ণ

মাকে আমার কাছে পাকাপাকিভাবে থাকার জন্য নিয়ে এলাম। ঘরে ঢুকে আমার ঠাকুরের আসনখানা দেখে খুশি হয়ে ওঠে। বাঃ, এই তো কি সুন্দর ঠাকুর বসিয়েছিস। মার প্রীত মুখখানা দেখে ছোটবেলায় ভালো রিপোর্টকার্ড আনার মত একটা অনুভূতি হয়। এখনও মার প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করার আকূলতা, মাকে খুশি করতে পারায় আনন্দ। অবশ্য পরদিনই বুঝতে পারি দেয়াল-কুলুঙ্গিতে রাখা উঁচু ওই আসনে মা পুজো করতে পারবে না। মা তো আর আমার মত চলতে চলতে শর্টকাট পুজো করে না, মার পুজো হলো ভক্তিভরে বসে দীর্ঘ সময় ধরে নানা উপকরণ আর উপাচার সমণ্বিত বিস্তারিত এক পর্ববিশেষ ।…

Read More

দাদু ও আমি

গতবার পৌষমাসে বড়দিনের ছুটিতে গ্রাম এর বাড়ি গুপ্তিপাড়ায় বেড়াতে গেছি | পৌষ মাসের কনকনে ঠান্ডা শেষ রাতে টিনের চলে টুপটাপ করে শিশির পড়ছে গাছ থেকে | সকালই ঘুম থেকে উঠে দেখি চারদিক কুয়াশায় ঢাকা,কিছুই দেখা যাচ্ছে না | আমি সোয়েটারের ওপর একটা চাদর মুড়ি দিয়ে বেরিয়ে পড়লাম | কাছেই বড়ো মাঠ, ঘাসের বুকে শিশির জমেছে | সজনে গাছ থেকে দু একটা ফুল পড়ছে | গাছের ডালে পাখিরা কিচিরমিচির করছে | চলতে চলতে একটা টালির ছাউনি দেওয়া বাড়ির সামনে থমকে দাঁড়িয়ে পড়লাম | কি সুন্দর গাঁদা ফুল সার উঠোনে জুড়ে |…

Read More

আমাদের পেন্সিল খেলা

নামজাদা এক মিশনারি স্কুলে পড়াশোনা করেছি। আনন্দময় এক আশ্বিনের সকালে হঠাৎ মনে পড়ল ছেলেবেলায় হারিয়ে যাওয়া এক অভিনব খেলার কথা। আমরা খেলাটি খেলতাম ক্লাসে – নিয়মিত- টিফিনের সময়। খেলাটি হল, পাশাপাশি খাতাগুলো রেখে – যা নাকি বাড়িঘর-অফিস কাছারি- স্কুল কলেজ- পাড়া – রাস্তা ইত্যাদি, আর ছিল নানা আকারের পেন্সিল, যারা প্রতিনিধিত্ব করত আমাদের আশেপাশের মানুষজনকে – যাদের সঙ্গে ছিল আমাদের রোজকার ওঠাবসা, নানান আদান প্রদান, বিনিয়োগ ইত্যাদি। সেইসব চরিত্ররা, যেমন বাবা,মা,ভাই,বোন,আত্মীয়স্বজন,পাড়া-প্রতিবেশী,শিক্ষিকা,বন্ধুরা মায় মুদিওয়ালাও পর্যন্ত নানান পেন্সিলের মাধ্যমে ও আমাদের monologue এ প্রান পেয়ে অনর্গল বিভিন্ন স্বরক্ষেপনে, আবেগে জীবন্ত – প্রাণবন্ত…

Read More

অসময়ের বৃষ্টি

খুব অসময়ের বৃষ্টি …. সকাল থেকে ছিপছিপ করে পরেই চলেছে ….থামবার নামটুকু নেই …. টিয়া গুগল এ একবার ওয়েদার ফোরকাস্টিং টা চেক করলো … ওরে বাবা …. এত বলছে নেক্সট চার দিন এমন ই চলবে ….এই নভেম্বর এর মাঝে এমন বৃষ্টি ভালো লাগে !হাল্কা ঠান্ডা ও পড়েছে ….টিয়ার মন টা খারাপ হয়ে গেল …. বেশ একটা টানা ছুটি পেয়েছিল সে … অর্ক ও … ভাবছিল এই সুযোগে একটু যদি কাছে পিঠে ঘুরে আসা যেত … কিন্তু এমন ওয়েদার থাকলে গিয়ে লাভ নেই ….. অর্ক আজ এখনো ফেরেনি অফিস থেকে ……

Read More

বুক !!

”ঠিক করে বসো সোনা ! আর কতবার শেখাবো যে মেয়েদের নীচু হয়ে বসতে নেই ! অতো ঝুঁকে বসো কেন তুমি ? বারবার বারণ করা সত্ত্বেও গলা বারো জামা গুলোই তুমি কেনো কেন বলতো !”এরকম কথা গুলোর সম্মুখীন হতে হয় আমাদের অনেকেরই রোজ ! রাস্তাঘাটে ‘ বুক ‘ প্রসঙ্গে শুনতে হয় , উফফ কি লাগছে ! ফুল ডবকা মাল ! এরকম আরো কত কি ! যদিও আলোচিত ‘বুক’ বিষয়ে পুরুষদের প্রতি ভগবান একটু কার্পণ্য করেছেন বটে ! না হয় মেয়েদের একটু বেশিই দিয়েছেন তাই বলে চারিদিকে এতো গরম হাওয়া ? সহ্য…

Read More

হানিমুন

আজও ওরা পাহাড়ের বেশ কিছু সুন্দর জায়গা দেখে সন্ধেবেলা হোটেলে ফিরলো। সেই সৌম্যদর্শন বৃদ্ধ লবিতে বসেছিলেন,বললেন“এই যে কেমন ঘুরলে তোমরা ? এই দক্ষিণের ট্রাইবাল ভিলেজটা তোমরা একবার দেখতে যেতে পার – – -” ঘরে ফিরে রীমা বললো “দেখো ঐ বুড়োকে এড়িয়ে চল, নইলে দেখবে রোজ জ্বালাবে। ” সুমন ওকে কাছে টেনে নিয়ে বলল, ”ছাড়োতো ওসব কথা , এবার একটু – – -” তৃতীয় দিন ওরা অনিচ্ছা সত্তেও সেই বৃদ্ধের রুমে গেল। ৫০তম বিবাহবার্ষিকী , বারবার বলেছিলেন। সারাঘরে ৫০টা মোমবাতি জ্বলছে, প্রচুর ফুলে সাজানো , একদিকে ধুপবাতি জ্বলছে। একটা গরদের শাড়ী…

Read More

বকশিশ

ব্যাঙ্কে একটা চেক জমা দিয়ে বেরুনোর সময় নন্দলালবাবুর নজরে এল, একটা স্লিপ হাতে এক বয়স্কা ভদ্রমহিলা একে ওকে কী যেন অনুরোধ করছেন। সকলেই তাকে এড়িয়ে চলে যাচ্ছে। নন্দলালবাবু ওনাকে জিজ্ঞাসা করলেন, কী ব্যাপার? -এই দেখ না বাবা, আমি কিছু টাকা তুলব।, কিন্তু, কাউকে দিয়ে লেখাতে পারছি না। নন্দলালবাবু হাত ঘড়িটা দেখে নিয়ে বললেন, ঠিক আছে আসুন আমার সঙ্গে, আমি না হয় লিখে দিচ্ছি। ফাঁকা একটা টেবিলে বসে নন্দলালবাবু পাশবই আর স্লিপটা ওনার কাছ থেকে নিয়ে বললেন, কত টাকা তুলবেন? -সাত হাজার টাকা, বাবা। স্লিপটা পূরণ করে ভদ্রমহিলাকে বললেন, নিন, এখানে…

Read More

চিঠি

গভীর রাতে গোটা কলকাতা নিঝুম  ঘুমে গড়িয়ে গেল।জোড়াসাঁকোর সদরের গ্যাসের আলো গুলিও ঘুমোল বোধ হয়।  আমি চুপিচুপি উঠে তখন তোমার  চিঠি পড়েছি।  বেলি ঘুমোচ্ছে ধরো আর শিয়রের জানলা দিয়ে একটু খানি চাঁদ আলো অনেক  খানি দখিন বাতাস  নিয়ে ঢুকে পড়লো ঘরে—ম্রিয়মাণ সেজের বাতি একটু কেঁপে নিভে গেল কেমন,আমি তখন স্পর্শ  দিয়ে তোমার  লেখা পড়ি। একটু একটু করে ছুঁয়ে ফেলি তোমার  মান অভিমান  আটপৌরে সংসার  ভাবনা —মনে হয় পদ্মা পার থেকে বেলির বাবা এসে আমাদের ঠিক পাশটিতে বসেছেন। তোমার  শরীর গন্ধ,আর দৃঢ়তর কাঁধ থেকে নেমে আসা কোমল বাহু আমাকে ছুঁয়ে দিল…

Read More

লাল তিতির

তিতলি আসতে আসতে মায়ের হাত টা সরিয়ে পা টিপে টিপে এসে দরজার কোণে বালতিটা উপুর করে রাখলো    ……….. তারপর ওটার ওপর উঠে দু’পা উঁচু করে সদর দরজার ছিটকিনিটা খুলেই দে ছুট….. আজ আসবে বলেছে লাল তিতির …… খুব দেরি হয়ে গেলো  … “তিতির কি অপেক্ষা করছে ওর জন্য !  নাকি ফিরে চলেই গেলো ! চলে যাবে !” বুক টা মোচর দিয়ে উঠলো তিতলি র ….সত্যি যদি লাল তিতির চলেযায় !! তিতির নাম টা তিতলি ই দিয়েছে ওকে ….তিতলি র ভালো লাগে ওকে এইনাম এ ডাকতে …. এটা একান্তই ওর দেওয়া নাম ….ওর সব চেয়ে কাছের বন্ধুকে… কেউ বিশ্বাস ই করতে চায়না লাল তিতির ওর সাথে কথা বলে …লাল তিতির আর তিতলি খুব ভালো বন্ধু ….. মা তো রোজ বকে ওকে , তিতলি কেন যে মা কে বোঝাতেই পারে না …!! রোজ নাকি ঘুমোতেই হবে …. বোঝে না লাল তিতির ওরজন্যই শুধু অপেক্ষা করে বসে থাকে বাগানের শেষ প্রান্তে …. পা চালিয়ে ছোটে তিতলি…..বাগানের ঘাসে পা রাখতেই রঙ্গন ফুলের গাছ টা তে তিতলি দেখতে পেল লালতিতির কে … ফুলের সাথে মিশে লুকিয়ে ছিলো ….. তিতলি কাছে যেতেই লালতিতির উড়ে এসে বসলো ওর হাতের    আঙুলে ….. রোজের মতো তিতলি হাত টা আসতে আসতে চোখের সামনে নিয়ে আসলো  … আর বললো …. “ভালো আছো লাল তিতির ? “তিতির ও রোজের মতো ফরফর করে উড়ে একবার ওকে চক্কর কেটেআবার এসে বসলো আঙুলে …..এই ভাবেই এককথা দুকথা …….জমে ওঠে ৮ বছরের তিতলি র সাথে লাল ফড়িং এর বন্ধুত্ব …..আর ছেলেবেলার গান ……সাঁঝ ঘনিয়ে আসে….. “তিতলি …. সোনা মা আমার …. ওঠো ওঠো ….. সন্ধ্যা লেগে গেছে …. চলো পড়তে বসতে হবে …. আজ অনেক হোমওয়ার্ক আছে … আর গানের রেওয়াজ টাও আজ করতে হবে …. আঁকার দিদির হোমওয়ার্ক ফিনিশ করেছ তো ! এই উইক এ আঁকার পরীক্ষা আছে কিন্তু ….চলো চলো …. উঠে পড় ….”মায়ের একনাগারে কথাগুলো যেন রেলগাড়ির মত  ঝমাঝম করে এলো আবার মিলিয়ে গেল ……সঙ্গে নিয়ে গেলো লাল তিতির কেও ….. তিতলি র চোখে ঘুম….আর লাল তিতিরের স্বপ্ন … হাতে পেনসিল আর হারানো শৈশবে বেড়ে ওঠা কঠোর বাস্তব …..   Suparna Pradhanআমি সুপর্ণা প্রধান । পশ্চিমবঙ্গের এক মফঃস্বলে (কৃষ্ণনগর ) ১৯৭৮ সালের ৯ ই মে আমার জন্ম । ডিপ্লোমা ইন্জিনীয়ারীং করলেও চাকরীতে মন ছিলো না কখনই । পরিবার…

Read More
Page 7 of 8
1 5 6 7 8