এই মেয়েকেও পছন্দ হয়ে গেল মণিরাদেবীর। ছেলেরও পছন্দ। কিন্তু, মণিরাদেবীর চিন্তা অন্যখানে। এর পূর্বেও কয়েকটি মেয়েকে পছন্দ হয়েছিল। কিন্তু, মণিরাদেবীর শর্ত শুনে ওই মেয়েরা কেউই বিয়ে করতে রাজি হয় নি। মণিরাদেবীর আশঙ্কা এই মেয়েটিও যদি পিছিয়ে যায়!
ওই বাড়ি থেকে বেরুনোর সময় মণিরাদেবী মানসীকে ফের ডেকে পাঠালেন, মানসীর চিবুক ছুঁয়ে বললেন, মা, তোমাকে আমার বেশ ভালো লেগেছে। আমি আলাদা ভাবে কিছু কথা বলতে চাই তোমার সঙ্গে। পার্স থেকে একটা ছোট কাগজ বের করে মানসীর হাতে দিয়ে বললেন, এতে আমার মোবাইল নম্বর আছে, তুমি আমায় ফোন কোরো।
দুরু দুরু বক্ষে একদিন মানসী ফোনটা করেই ফেলল। মণিরাদেবীর বক্তব্য শুনে মানসী হতবাক, গোপাল আমার একমাত্র সন্তান। ওকে ছোটবেলা থেকে তুতুবুতু ক’রে মানুষ করেছি। ও আমাকে সব সময় চোখে হারাতো। আমাকে দেখতে না পেলে গোপাল এত উদ্বিগ্ন ও ব্যাকুল হয়ে পড়ত যে স্কুলে ওকে আমি সঙ্গে করে নিয়ে যেতাম, ওখানে সারাক্ষণ বসে থাকতাম আর ছুটি হলে সঙ্গে নিয়ে আসতাম। গোপাল এখন ভাল একটা চাকরি করে, কিন্তু লজ্জার কথা কী বলব তোমায়, এখনও আমাকে ওর সঙ্গে সঙ্গে থাকতে হয়। আমার বয়স হয়েছে, আমি আর এখন পেরে উঠছি না। বিয়ের পর সেই কাজটা তোমায় করতে হবে।
মানসী কোনও সঠিক উত্তর খুঁজে পায় না। মণিরাদেবী বলতে থাকেন, মা, বুঝতে পারছি আমি তোমাকে একটা বড় কঠিন ও অবাস্তব প্রস্তাব দিয়েছি। আমার দৃঢ় ধারণা, আমি যা পারি নি তা তুমি পারবে, ভালবাসা দিয়ে তুমি গোপালকে মানুষ করতে পারবে। এখনই তোমায় কোনও উত্তর দিতে হবে না। তুমি ভেবে নিয়ে আমায় জানিও। আমি তোমার উত্তরের আশায় থাকবো।
মানসী বলল, ঠিক আছে মা, আমাকে একটু ভাববার সময় দিন, আমি আপনাকে জানাবো। মণিরাদেবী খুশি হয়ে বললেন, সেই ভালো মানসী, তুমি একটু ভেবেই না হয় উত্তর দিও। মানসীর এক বন্ধুর মা মনোবিদ। মানসী তার সঙ্গে দেখা করে সব বলল এবং জানতে চাইল, ওর কী উত্তর দেওয়া উচিত। উনি সব শুনে বললেন, এটা তো অ্যাংজাইটি ডিস্ অর্ডারের কেস্। এটা কোনও সমস্যাই নয়। তুমি বিয়েতে রাজী হয়ে যাও। এর পর আমি যেমন যেমন বলব, তুমি তা করবে এবং আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে তোমরা খুব সুখী দম্পতি হবে।
মানসী রাজি হতেই মণিরাদেবী কালবিলম্ব না করে ছেলের বিয়ের ব্যবস্থা করলেন। বিয়ের পরপরই গোপালকে নিয়ে মানসী ওর সেই বন্ধুর মায়ের সঙ্গে দেখা করল। ডঃ সুতপা সেন গোপালকে অনেক কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করলেন। মানসীর সঙ্গে পৃথক ভাবে কথা ব’লে বুঝিয়ে দিলেন কী ভাবে কী করতে হবে।
মানসী বেশ কিছুদিন গোপালের সঙ্গে ওর অফিসে গেছে। পাড়ার লোকেরা জানতো দু’জনেই এক অফিসে কাজ করে। মাঝে মধ্যে মানসী নানা ছুতো ক’রে অফিস যাবার সময় মাঝ পথে নেমে যেতো বা অফিস ছুটির সময় গোপালকে আনতে যেতো না। ডঃ সুতপা সেনের পরামর্শ মত মাঝে মাঝে গোপালকে কাউন্সেলিং এর জন্য ওনার কাছে নিয়েও যেতো। ক্রমশঃ গোপাল আত্মবিশ্বাস ফিরে পেল।
পাড়ার লোকেরা জানলো, মানসীর চাকরিটা গেছে।