নামজাদা এক মিশনারি স্কুলে পড়াশোনা করেছি। আনন্দময় এক আশ্বিনের সকালে হঠাৎ মনে পড়ল ছেলেবেলায় হারিয়ে যাওয়া এক অভিনব খেলার কথা। আমরা খেলাটি খেলতাম ক্লাসে – নিয়মিত- টিফিনের সময়।
খেলাটি হল, পাশাপাশি খাতাগুলো রেখে – যা নাকি বাড়িঘর-অফিস কাছারি- স্কুল কলেজ- পাড়া – রাস্তা ইত্যাদি, আর ছিল নানা আকারের পেন্সিল, যারা প্রতিনিধিত্ব করত আমাদের আশেপাশের মানুষজনকে – যাদের সঙ্গে ছিল আমাদের রোজকার ওঠাবসা, নানান আদান প্রদান, বিনিয়োগ ইত্যাদি।
সেইসব চরিত্ররা, যেমন বাবা,মা,ভাই,বোন,আত্মীয়স্বজন,পাড়া-প্রতিবেশী,শিক্ষিকা,বন্ধুরা মায় মুদিওয়ালাও পর্যন্ত নানান পেন্সিলের মাধ্যমে ও আমাদের monologue এ প্রান পেয়ে অনর্গল বিভিন্ন স্বরক্ষেপনে, আবেগে জীবন্ত – প্রাণবন্ত মানুষ হয়ে যেত।
দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল আমাদের এই “পেন্সিল খেলা”। খেলাটি দেখতে অন্য senior ক্লাসের মেয়েরাও হাজির হত। বলা বাহুল্য, রীতিমত ভিড় দেখে কয়েকজন শিক্ষিকাও অবাক হয়ে আমাদের কাণ্ডকারখানা দেখতেন।
আমরা গল্পের মত অতি স্বাভাবিকভাবে, যেখানে যেটুকু আবেগ প্রয়োজন, সেটা দিয়ে verbally enact করে যেতাম আর হাত দিয়ে পেন্সিলগুলোকে সচল রাখতাম।
এই মজাদার খেলা দেখতে দেখতে কেউ কেউ অট্টহাস্য করে উঠত, কেউ বা ফ্যাঁচ করে কেঁদেও ফেলত – কিন্তু আমরা serious মুখে অভিনয় চালিয়ে যেতাম। সেই অভিনব অভিনয়ের মাঝে ছিল নিত্যদিনের সুখ, দুঃখ, ভালবাসা, ঝগড়া, রাগ, অভিমান, শাসন সঅঅব।মানে, নানান মশলায় পরিবেশিত হত এই চমৎকার চাটনি।দর্শকরা তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করত। ক্লাসে যাবার ঘণ্টা বেজে গেলেও, নড়তে চাইত না। অতএব, আমাদের নামে complain আসত দুষ্টু দর্শকদের কাছ থেকে।কিন্তু আমরা দমে যেতাম না; আমাদের করতেই হত সেই খেলা।
বাড়িতেও এই খেলা দেখাতাম। আমার এক মেশোমশাই Mitra Institutionএর নামকরা ইংরাজির শিক্ষক ছিলেন। তিনি প্রায়ই আসতেন আমার এই খেলা দেখতে। আমার ভাই বোন বাবা মা সবাই মজা পেত এই খেলায়।
এখন ভাবতে অবাক লাগে, তখন তো সিনেমা থিয়েটার আমরা এত দেখতাম না; বোকা বাক্সর তো কথাই ওঠে না। তবু আমরা কি ভাবে যেন ভাবগুলো পরিবেশন করতে পারতাম। হয়তো আমরা প্রচুর বই পড়তাম, রেডিওতে নাটক শুনতাম – অবসরে অনেক গল্প করতাম … তাই পারতাম।
ক্রমশঃ বড় হয়ে যাওয়ায় সেই খেলাটির আর পুনরাবৃত্তি হয় নি।
ভাবতে ইচ্ছে করে যে সেই আবেগমিশ্রিত, রঙিন কল্পনায় জড়ানো নানান চরিত্রের সেই কথোপকথনের মাঝে কি বিরাট কোন সম্ভবনার বীজ লুকিয়ে ছিল? – কে জানে ?
Very well scripted …indeed these minute nuances perhaps held within itself, infinite possibilities .