গভীর রাতে গোটা কলকাতা নিঝুম ঘুমে গড়িয়ে গেল।জোড়াসাঁকোর সদরের গ্যাসের আলো গুলিও ঘুমোল বোধ হয়। আমি চুপিচুপি উঠে তখন তোমার চিঠি পড়েছি। বেলি ঘুমোচ্ছে ধরো আর শিয়রের জানলা দিয়ে একটু খানি চাঁদ আলো অনেক খানি দখিন বাতাস নিয়ে ঢুকে পড়লো ঘরে—ম্রিয়মাণ সেজের বাতি একটু কেঁপে নিভে গেল কেমন,আমি তখন স্পর্শ দিয়ে তোমার লেখা পড়ি। একটু একটু করে ছুঁয়ে ফেলি তোমার মান অভিমান আটপৌরে সংসার ভাবনা —মনে হয় পদ্মা পার থেকে বেলির বাবা এসে আমাদের ঠিক পাশটিতে বসেছেন। তোমার শরীর গন্ধ,আর দৃঢ়তর কাঁধ থেকে নেমে আসা কোমল বাহু আমাকে ছুঁয়ে দিল যেন গো। ঐ যে একরত্তি মেয়েটি আমাদের! ঘুমন্ত -আঁধারেও যার শরীর গোলাপী আভা ছড়ায়,এ যে অবিকল তুমি!আমার বুঝি অতো রূপ আছে?তুমি ওর রেশম চুলে চুমা আঁকলে গহন মায়ায়। তোমার চিঠির ভিতর থেকে সেই তুমি কেমন অনায়াস স্বচ্ছন্দে আমার কাছে এলে। একটু সংসার ,নতুন কোন রান্নার আব্দার ,আমার ক্ষীণ অভিমান আর অনেকখানি আদরে ভরে উঠলো আমার রাতের অবসর।মনে হলো এ সবই কোন একদিন পড়বো তোমার না লেখা কবিতায়—-আমার কথা ভেবে লেখা কবিতা– ডাক দিলে এইবার ‘ ছুটি ’ বলে ,বল্লে যেন-‘ ওঠো ভোর হলো যে।’ আমার রাত পোহালো!!
আমি তো তোমার ছুটিই। কবির ছুটি,গুরুর ছুটি রবিবারের ছুটি।
তোমার সব কটি চিঠি আমি যত্ন করে তুলে রেখেছি। ভবিষ্যতে লোক জানবে যে- তাই তো শত ব্যস্ততার মধ্যেও কবি কদাপি ভোলেন নি তাঁর সংসার -সন্তান-স্ত্রী -অভাব ও অভিযোগ !!!
উত্তরে আমি কি যেন লিখেছিলেম!!!হারিয়ে গিয়েছে!কালের তলায়। ভবতারিণীর বাপের ঘর—সে যেন কোথায়—যশোর—
আমার চিঠি কেউ রাখে নি।
আমার ছিন্নপত্র।