হঠাৎ দমকা হাওয়ায় কি একটা পড়ে যাওয়ার আওয়াজ। অন্য ঘরে গিয়ে দেখল পড়ে আছে মাটিতে তাদের ছবিটা। তুলতে গিয়ে ভালো করে দেখতে ইচ্ছা হল। সেই বিয়ের বছরে জোড়ে তোলা ফটো তাদের। ছবিটা দেখে শাশুড়ি-মা বলেছিলেন –
এ যেন অপু আর দুর্গা।
ফিক করে হেসে ফেলল ইলা। অনেক পেছনে চলে গেল মনটা।
১৭ই ডিসেম্বর । জন্মদিন আসছে ইলার। এখনকার কাল হলে জন্মদিন পালন একটা বিশাল সাড়া জাগানোর ব্যাপার হত। কিন্তু বছর পঁয়ত্রিশ আগে সব বাড়িতে অত জন্মদিন পালনের চল ছিল না।
আগের দিন সন্ধ্যায় রজত বলল –
কাল কিন্তু সন্ধ্যায় বেরবো ।
‘সে কি?’ আঁতকে উঠল ইলা। “বাবা মোটেই পছন্দ করবেন না। সপ্তাহের মধ্যে আবার বেরনো । পরীক্ষা আসছে আমার। ও রে বাবা, ও সব জন্মদিন পালন আর করতে হবে না”।
কে বা শোনে কার কথা। যা মাথায় ঢুকেছে , টা তো আর বেরোবে না রজতের মাথা থেকে।
সামনে রয়েছে ড্রেসিংটেবিল – রজত খাটে বালিশ ঠেসান দিয়ে শুয়ে । ইলা তার পড়ার টেবিলে । কথা হচ্ছে ড্রেসিংটেবিলের আয়নার কাঁচের দিকে তাকিয়ে। শ্বশুর মহাশয়ের চোখকে ফাঁকি দিয়ে পড়ুয়া বউ আর ছেলের গল্পের একমাত্র মাধ্যম ঐ ড্রেসিংটেবিল।
সারারাত বেশ টেনশন । কাল কি করে কথাটা বলা যায়। সদ্য দুদিন আগে বকুনি খেয়েছে ইলা। বিকেলে বসে নেলপালিশ লাগাচ্ছিল পড়াশোনা না করে।
সকালবেলা শ্বশুর মহাশাই কে নিত্যকালীন প্রণাম করার সময় ইলা বলল –
“বাবা, আজ সন্ধ্যেবেলা অনার অফিসের এক সহকর্মীর বিয়েতে নিমন্ত্রন”।
“ওই কর। আর লেখাপড়া করে কাজ নেই”।
যাক বাবা, তার মানে অনুমতি পাওয়া গেছে। লাফাতে লাফাতে শাশুড়ি মার কাছে চলল ইলা।
“মা, আজ আপনার ছেলের অফিসের এক বন্ধুর বিয়েতে রাতে যেতে হবে। বাবাকে বলেছি। কিছু বলেন নি”।
ব্যস, অমনি খুশি ইলার শাশুড়ি।
“আরে, বলবেন কেন কিছু! অফিসের লকের বিয়ে – যেতে তো হবেই”।
পাখির মত হাল্কা হয়ে গেল ইলার মনটা । শুধু শুধু টেনশন করার কোন প্রয়োজন ছিল না। পড়ার চেয়ারে বসে গেল। আজ কলেজ নেই। ভালো করে পড়াশোনা করতে হবে।
হঠাত ছুটে এলেন শাশুড়ি মা।
-“ওরে , যাবি তো – কিছু উপহার তো কিনতে হবে। তোর শ্বশুর কে বলে দিচ্ছি, অফিস ফেরত নিয়ে আসবেন”।
এই রে – এ তো মাথায় ছিল না ইলার।
“না মা, আমি আমার একটা শাড়ি ভেবে রেখেছি। গোলাপি রঙের শাড়ি আমি পড়ি না। তাই সেই শাড়িটা দেওয়া যেতে পারে”।
তাই ঠিক করল শাশুড়ি বউ মিলে। উনি রান্নাঘরে ব্যস্ত থাকাকালীন তৈরি হল একটা শাড়ির বাক্স- উপহারের মোড়কে । ভিতরে অবশ্য কিচ্ছু নেই।
সারাদিন শাশুড়ি মা ব্যস্ত – বউ কোন শাড়ি পড়বে , চুলটা কেমন করে বাঁধবে ।
সন্ধ্যে হল – ইলা তৈরি হল, শাশুড়ির নির্দেশ অনুযায়ী । রজত আস্তেই বেরিয়ে পড়ল। ইলা পড়েছে বেগুনী বেনারসি , রজত স্যুট । বিয়ে বাড়ি যাওয়ার সাজ যেমন হওয়ার কথা।
দুর্গা দুর্গা বলেই মা আঁতকে উঠলেন –
“আরে, উপহার টা ফেলে চলে যাচ্ছিস যে – কি যে করি এই পাগল দুটোকে নিয়ে” –
অগত্যা , আলমারি খুলে সেই মোড়কে বাঁধা উপহার চলল হাতে। প্রথম গন্তব্যস্থল , গরিয়াহাটের এক ফটো তোলার স্টুডিও । দুরকম ফটো তোলা হল। একটা চশমা পড়ে , একটা চশমা ছাড়া। এরপর যাওয়ার যায়গা বাবুরাম ঘাট । ট্যাক্সিতে বসে খানিক গয়না খুলে ভ্যানিটি ব্যাগে রাখা হল। এরপর একটা গাছের তলায় বসে জমিয়ে গল্প দুজনার ।
ওঠবার সময় রজত বলল, “আর কতক্ষন এই খালি মোড়ক সাথে চলবে? ফেলে রাখ এখানে”।
প্যাকেটটি গাছের তলায় ফেলে যেই না দু পা এগোনো, পেছন থেকে আওয়াজ , “দাদা, ভুলে গেছেন কিছু, নিয়ে নিন”।
অগত্যা আবার সেই বিশাল প্যাকেট হাতে চলল । এবার রাস্তা পার হয়ে রেস্টুরেন্ট এ ঢোকার পথে আবার চেষ্টা হল প্যাকেটটাকে রাস্তায় ফেলার।
কিন্তু সহৃদয় ব্যাক্তির তো অভাব নেই। ছুটে চলে এল কিছু লোক। “এই নিন, পড়ে গেছে হাত থেকে, একটু খেয়াল রাখবেন তো”।
পাশ থেকে টিপ্পুনি।
“রাখবেন কি করে। নতুন বিয়ে হয়েছে মনে হয়। সব বেভুল”।
সত্যি, অনেক পুরনো কালে চলে গেছিল মনটা ইলার। কোথায় সেই রাশভারী শ্বশুর মহাশয় , কোথায় বা সেই আদরের শাশুড়ি মা। জোড়ে তোলা ছবি মনে করিয়ে দেয় সেই দিনগুলোর কথা। পৌষ মাসের শুরুতে কোথায় সেই বিয়েবাড়ি – জিজ্ঞাসা করেন নি বাবা মা। আর সেই ভেতর ফাঁকা উপহারের মোড়ক ? এক যায়গা থেকে অন্য যায়গা খুঁজতে খুঁজতে শেষ পর্যন্ত কুটি কুটি হয়ে গঙ্গাবক্ষে ভাসতে লেগেছিল।
আএ বাড়ি ফিরে শাশুড়ি মা কে নতুন বউএর সাজসজ্জা আর নিমন্ত্রন বাড়ির খাওয়ার তালিকা বলার সময় হেসে ফেলতে ফেলতে অনেক কষ্টে নিজেকে সংযত করেছিল ইলা।
স্মৃতির মোড়ক

Darun laglo.. 🙂
Hello Ria,
Thanks for the comment. Pls do visit us on a regular basis & also pls do invite your friends to this bilingual magazine site.
i love it…..very nicely written…..hope to read more by this author!!
Hello Madhurima,
Thanks for the comment. Pls do visit us on a regular basis & also pls do invite your friends to read this article.
Khub bhalo laglo.. aro chai
Darun hoyeche… porte porte prurono smriti mone pore gelo…
Khub valo laglo… Nostalgia ar comedy mishiye besh valo likhechen… besh onno rokom.
কি যে ভালো লাগল… যেন গল্প নয়, আদতে কিছু ফটোর অ্যালবাম…