শাওয়ারের জলে গা ভেজাতে ভেজাতে মনটা হঠাৎ চিন্তাটা আসে, মনটা ছ্যাঁত করে ওঠে ব্রতীনের; এমনটা কি হওয়া সম্ভব? মনে মনে ঠিক করে, আজ একবার পরীক্ষা করে দেখবে….. নিজের ভেতর অসম্ভব এক আত্মগ্লানি অনুভব করল, জলের মধ্যে থেকেও সেই অনুভুতি ভেসে গেল না….ব্রতীন, ডালহৌসির সরকারি অফিসের এক পদস্থ অফিসার; বাবা মারা যাবার পর তার চাকরিটাই পেয়েছে। কম বয়সে সংসারের ভার নেবার ফলে, বিয়েটা করা হয় নি। ছোট ভাই “অহি” কে সে নিজের ছেলের মতন মানুষ করেছে, সে নিজে যা যা করতে পারে নি…. সব ভাইএর জন্য করেছে; অহিকে কখনও কোনও অভাব বোধ হতে দেয় নি। অহি নিজেও দাদাকে ভগবানের মতন শ্রদ্ধা করে।
পরমার বাবা-মার অব্রাহ্মণ অহির সাথে বিয়েতে আপত্তি ছিল, কিন্তু ব্রতীনের সাথে আলাপ হবার পর, নির্দ্বিধায় বিয়েটি মেনে নেন। পাড়া-প্রতিবেশির থেকেও তারা জেনেছিলেন দু ভাইএর রাম-ভরতের মতন সম্পর্কের কথা। পরমাও এই বাড়ি এসে ভাসুর নয়, এক দাদা পেয়েছে।
তুতাম আসার পর ব্রতীনের সংসারটা যেন একটা পরিপূর্ণ রূপ পেয়েছে। অহি প্রথম যেদিন পরমার সাথে আলাপ করালো, পরমাকে দেখেই মায়ের মুখখানা মনে পরেছিল তার।মেয়েটা সত্যি দু ভাইএর বাড়িটাকে ‘ঘর’ বানিয়ে ফেলেছে। আর এখন তো তুতামসোনা আসার পর, জীবনটাই অন্য রকম হয়ে গেছে। আগে অফিস থেকে ইচ্ছে করেই একটু দেরিতে আসত ব্রতীন – ভাইএর দাম্পত্যকে একা উপভোগ করার সুযোগ দিত; এখন যত তাড়াতাড়ি পারে বাড়ি আসে, একটা ফোকলা দাঁতের হাসির টানে।
মাত্র আটমাস বয়েস পু্ঁচকেটার, জ্যাঠাঅন্ত প্রান। ইদানিং তো একটা ভারি সমস্যা হয়েছে, সন্ধ্যে হলেই তুতাম কান্না শুরু করে, আর জ্যাঠার কোলে উঠলেই কান্না শেষ।তাই জ্যাঠাও যেনতেনপ্রকারেণ যত তাড়াতাড়ি পারে, বাড়ি আসার চেষ্টা করে।
গত তিনদিন ধরে ব্রতীন শরীরটা ভালো যাচ্ছিল না, বাড়িতেই ছিল। কিন্তু, সেই ক’দিন তুতামের বিকেলের কান্না জ্যাঠার কোলে উঠেও থামে নি। ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ খাওয়ানো হল… তাও।
গতকাল অফিস জয়েন করে একজন কলিগের শালীর খবর পায় ব্রতীন, যিনি নাম করা চাইল্ড স্পেশালিস্ট। সঙ্গে সঙ্গে পরমাকে ফোনে জানিয়ে অ্যাপয়েন্টমেন্টও নিয়ে নেয়। কিন্তু, গতকালই বাড়ি ফিরে তুতামকে কোলে নেবার পর, তুতাম আর কাঁদে নি।ব্রতীন খুব খুশি, এতদিন ভীষণ চিন্তায় ছিল সে।
আজ সারাদিন একবারও বোতল ছুঁল না ব্রতীন। খুব কষ্ট হচ্ছিল, নেশার গমক এলেই সে তুতামের মুখখানা মনে করছিল। এই একটি ব্যাপার সে কিছুতেই ছাড়াতে পারছিল না, ক্লাস টুয়েলভে পড়ার সময় মনোজ-তরুনদের সাথে ফুটবল খেলতে গিয়ে এই নেশার শুরু; ব্রতীন মদ খায়। মাতাল হয় না, কিন্তু দিনে একবার লাগেই। পরমা আসার পর, বাড়িতে খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে, অফিস ফেরত কয়েক ঢোঁক না নিয়ে এলে পারে না।ক’দিন শরীর যারপরনাই খারাপ ছিল…পেটের গণ্ডগোলে শয্যাশায়ী প্রায়, সেই ক’দিন খাওয়া হয় নি।
সন্ধ্যেবেলা বাড়ি ফিরে তুতামকে কোলে নিল, অনেক রকম চেষ্টা করল, কান্না থামল না।
যা ভেবেছিল, ঠিক তাই, গন্ধে নেশা…. তুতামের !!!!!!
মায়ের কথা মনে পড়ল তার; কতবার বলেছিল মানুষটা, সে শোনে নি।