জীবন সব সময় , সময় দেয় না।
রিম্পা ছোট থেকেই বাবার থেকে কাকার বেশি কাছের ছিল । বাবা যেহেতু ব্যবসা নিয়ে খুব ব্যস্ত থাকত , তাই সব আদর আবদার মেটাত ওর কাকা। সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে কাকার কাছে চলে যেত।তারপর ব্রাশ করান , খাওয়ান , স্কুলে পৌঁচ্ছে দেওয়া , সর্বস্ব কাকার দায়িত্ব। কাকার একটা স্কুটার ছিল , আর সেই স্কুটারে সব সময় সামনে দাঁড়িয়ে যেত ও। কোন এক অজানা কারনে স্কুটারের পিছনে বসতে রিম্পার খুব ভয় করত। হয়ত রিম্পার মনে হত কেউ যদি পেছন থেকে তুলে নেয় ওকে, কাকা তো সামনে দেখছে , পেছনের তো আর দেখতে পাচ্ছে না! রোজ অফিস থেকে ফেরার সময় রিম্পার পছন্দের মিষ্টি রসকদম্ব নিয়ে আসত কাকা । সকালে স্কুল ছিল বলে ১০টার মধ্যে ছুটি হয়ে যেত। তাই ছুটির সময়ও কাকাই নিতে যেত। তারপর একটু বড় হতে মা রিক্সা করে দিয়েছিল মাস মাইনেতে । তবে তাতে কাকার সাথে ওর সময় কাটানোয় কোন বিরতি পরেনি।এহেন কাকা যে হঠাৎ বিয়ের পর এত পাল্টে যাবে , রিম্পা বুঝতেও পারেনি। তখন ওর কতইবা বয়স ,৯ কি ১০ বছর হবে খুব জোড়। ওদের বাড়িটা ওর বাবার তৈরি করা , তাই কাকার বিয়ের পর নতুন কাকিমা শুদ্ধু কাকা ওদের পৈত্রিক বাড়িতে চলে যায়।রিম্পার ছোট মনে এই ব্যাপারটা খুব গভীর দাগ কেটেছিল । ওর মনে হয়েছিল , কাকাকে বুঝি নতুন কাকিমা কেড়ে নিল।কাকিমার ওপর রাগ হতে লাগল । ওদের বাড়িতে কাকা কাকিমা এলে, ও কথা বলত না , ধীরে ধীরে নিজের শিশু মনে একটা পর্দা তৈরী করে ফেলল।যত বড় হতে লাগল রাগ অভিমানটা শক্ত ইটের দেওয়ালের মত হয়ে গেল । কিন্তু ছোটবেলার কাকাকে তখনও খুব মিস্ করত। মাধ্যমিকের রেজাল্ট ভাল করেছিল বলে গুরুজনেদের আশির্বাদ নিচ্ছিল ঘরোয়া একটা অনুষ্ঠানে , কাকা থাকা স্বত্বেও কাকাকে প্রণাম করেনি রিম্পা , মনে মনে খুব কষ্ট পেয়েছিল ,কিন্তু কোথাও যেন কাকাকে অপমান টুকু করে খুব মানসিক শান্তি পেয়েছিল ,যেন বেশ একটা কঠিন শাস্তি দিতে পেরেছে।এর পর রিম্পা স্নাতোকত্তর পাশ করেছে, নিজের ব্যবসা করেছে , বিয়ে করেছে , কাকিমার সাথে কথা বলেছে , গল্প করেছে ,কিন্তু কখনও আর কাকার সাথে কথা বলা হয়নি। ধীরে ধীরে সংসার করতে গিয়ে এবং বয়স বাড়ার সাথে সাথে রাগ অভিমান সব গলে জল হয়ে গেছে ।বহুবার ভেবেছে যাবে কাকার কাছে , নিজের বোকামির ক্ষমা চাইবে, কিন্তু সুযোগই হয়ে ওঠেনি। সব থেকে কষ্ঠের হল আর কোনো দিন সুযোগ হবেও না। হঠাৎই কিডনি ড্যামেজ হয়ে কাকা চলে যায় ইহলোক ত্যাগ করে আর রেখে যায় রিম্পার মনের একরাশ আফসোস ।