– দিদা, একটা গল্প বলো।- গল্প? (এই রে, নতুন কিছু গল্প যে মনে করতে পারছি না!) আচ্ছা, আজ তোমাকে অন্য একটা দিদার গল্প বলি? আমার দিদার গল্প।
শুরু হল সুরমার গল্পের আসর। অদ্ভুত আসর সেটা। Skypeএ একধারে ছোটো রিয়া আর অন্যধারে তার দিদা। মধ্যের দূরত্বটা যদিও সুদূর ইউরোপ থেকে ভারতের দুরত্ব – এদের কাছে সেটা কখনই খুব গুরুত্বপূর্ণ নয়। রান্নাবাটি, পুতুলখেলা থেকে গল্পবলা সবই চলে – এই ধারে তুমি আর ঐ ধারে আমি – দিদা আর তার ছোট্ট নাতনীর মধ্যে।
– রাঁচি ছিল আমাদের মামার বাড়ি।শীতকালে আমরা যখন মা, মাসীদের সাথে যেতাম, খুব মজা হত, জানো রিয়া?
বলে চলে সুরমা।
-‘তোমার দিদা ওখানে থাকতে?’ জিজ্ঞাসা ছোট্ট রিয়ার।
– হ্যাঁ, আজ তার গল্পই তোমায় শোনাব। জানো, আমার দিদা খুব সাহসী মহিলা ছিলেন।
– ‘ভুতোর সাথে fight করতে পারতেন?’ রিয়ার প্রশ্ন।
– ভুতো? মানে ভুত?
– হ্যাঁ, উনি একবার fight করেছিলেন ডাকাতের সাথে। ভীষণ গায়ে জোর ছিল তো। বলি শোনো গল্পটা।
গলায় রহস্যের সুর এনে আরম্ভ করল সুরমা।
– সেটা ছিল এক গরমের দুপুর। মামাবাড়ির দাদুরা সব অফিসে আর মামারা কলেজে। ছোটোদিদা, ন’দিদা, আমার দিদা রান্নাঘরে। এমন সময় হঠাৎ আমার দিদা উঠে বাইরের ঘরে গেলেন। কিসের যেন শব্দ হচ্ছে….
– রিয়া উৎকণ্ঠিত – শব্দ? ভুত এল?
– এটা তো অনেকদিন আগের কথা। তখন সদর দরজা বন্ধ রাখা হত না আর মামাবাড়িতে ছিল অনেকগুলো বাইরে থেকে ঢোকার রাস্তা – বলে চলে সুরমা।
– দিদা যেই শোবার ঘর পাশ করে বাইরের ঘরের দিকে যাচ্ছেন, দেখেন কি… একটা মুষকো লোক আলমারি খুলে সব জিনিষ নিয়ে একটা বিশাল পোঁটলা বাঁধছে।
Skype এর অন্যধারে রিয়া মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনছে।
– তাকে দেখতে খুব ভয়ানক। কপালে লাল টিকা, কালো গোঁফ – ইয়া ষণ্ডা চেহারা। দিদা তো ‘তবে রে’ বলে চিৎকার করে লোকটাকে জাপটে ধরেছে।
– গোলগোল চোখ করে রিয়া বলল –‘সে কি, তোমার দিদাকে মারেনি ঐ ডাকাত?’
– শোনো চুপ করে। লোকটা প্রথমে থতমত খেয়ে গেছে। তারপর পোঁটলা নিয়ে বাগানের দিকে ছুটতে চেষ্টা করল। দিদাও ছাড়ে না।দুজনে ধস্তাধস্তি করতে করতে যখন বাগানের পেয়ারা গাছের কাছে পৌঁছেছে, দিদা তাকে দু হাত পিছমোড়া করে গাছের সঙ্গে আটকে রেখেছে আর প্রচণ্ড চিৎকার করছে।দিদার চিৎকারে বাড়ির অন্য দিদারা আর আশেপাশে বাড়ির লোকেরা ছুটে এল আর একটা শাড়ি দিয়ে শক্ত করে গাছের সঙ্গে বেঁধে ফেলল।
– ‘লোকটা কি মরে গেল দিদা?’ রিয়ার উৎকণ্ঠা ভরা জিজ্ঞাসা।
– না, না, পুলিশ এসে ধরে নিয়ে গেল। জানো, পুলিশ কি বলল? বলল, ঐ লোকটা একটা বড় ডাকাত। পুলিশ নাকি অনেকদিন ধরে ওকে খুঁজছিল। আমার দিদাকে কোর্টে গিয়ে ঐ দুষ্টু লোকটার বিরুদ্ধে সাক্ষী দিতে বলেছিল। দিদা নাকি অনেক পুরস্কার পাবেন। অবশ্য, দাদুরা রাজী হন নি।
– ‘তারপর?’ রিয়ার গল্প শোনা শেষ হল না।
– এরপর আবার তারপর? আচ্ছা শোনো, একটা মজার ঘটনা আমার দিদাকে নিয়ে। একবার দিদা কলকাতায় আমাদের বাড়ি এলেন ছোটমামার সাথে। হঠাৎ ওনার খুব জ্বর এসেছিল। ডাক্তারবাবু এলেন। প্রেসক্রিপশন লেখার সময় বললেন- ‘হ্যাঁ, বলুন, ওনার নামটা বলুন’।
– ‘নাম?’ ছোটমামা তাকান মায়ের দিকে আর মা চাল ছোটমামার দিকে
– ‘কই, বলুন’ – ডাক্তারবাবু আবার জিজ্ঞাসা করলেন
– ‘বোলো, মেজদি বোলো, তুমিই বোলো’ – মেজমামা বললেন
– ‘বোল, তুই বোল খোকু’, মা বলছেন
অবাক বিস্ময়ে একবার মায়ের মুখের দিকে, একবার ছোটমামার মুখের দিকে তাকাতে তাকাতে আমি বলে উঠলাম
– ‘শিবরাণী দেবী’
হ্যাঁ হ্যাঁ, শিবরাণী দেবী, শিবরাণী দেবী – মা ও মামা সমস্বরে বলে উঠলেন।
– বিস্মিত রিয়া অনুযোগ ভরা কণ্ঠে বলল – ‘এ কি, মায়ের নাম জানে না?’
– ছোট্ট রিয়া, তোমায় বোঝাবো কি করে পুরনো কালের কথা। আগেকার সময়ে ছেলে মেয়েদের মায়ের নাম উচ্চারণ কোর্টে দেওয়া হত না। মা যে গুরুজন। তাই হঠাৎ করে নামটা বলতে হবে ভেবে , মা ও মামা ভেবে চলছিলেন।
বিষয়টার আর বিশদ ব্যাখ্যা না করে সুরমা গান ধরল –
“ আমার গল্প ফুরালো
নটে গাছটি মুরালো”
– আজকের গল্প এই পর্যন্তই রিয়া; পরের দিন আবার অন্য গল্প বলব।
VERY GOOD…KEEP IT UP…ENJOYED THE STORY…. ER EI GOLPER SATHE SATHE AMRA KICHU KGONER JONNO CHOTOBALAY PHIRE GELAM….
Dida baba golpota pore shonalo….tarpor???