Hello!
একটা গল্প বলব। গল্পটা ডিডার কাছে শোনা। যেটা ডিডা শুনেছিল তার ডিডার কাছে। ইন্টারেস্টিং গল্প। তোমাদেরও নিশ্চই ভালো লাগবে।
অনেক অনেক দিন আগে একটা মজার রাজ্য ছিল যেখানকার মানুষগুলোও ছিল আজব। দেখতে তারা আমাদেরই মত ছিল কিন্তু সাজপোষাক, খাওয়াদাওয়া, ধরণধারণে ছিল একেবারো আলাদা। তারা সূর্য-ওঠা ভোরে ঘুম থেকে উঠত, মাথায়গায়ে তেল মেখে স্নান করত, কিন্ডেল না পড়ে বই নামে এক গোছা বাঁধানো কাগজ পড়ত, কাগজের ওপর পেন বলে একটা আজব যন্ত্র দিয়ে হাত দিয়ে লিখত আর পায়ে হেঁটে যাতায়াত করত । সবচেয়ে মজার কথা, আমরা তো ভূমিকম্প হলে বা লিফ্ট খারাপ হলে তবেই সিঁড়ি দিয়ে নামি কিন্তু ওই রাজ্যে কেউ কখনও লিফ্ট দেখেনি, সবসময় সিঁড়ি ভেঙেই ওঠানামা করত বেচারারা! আরেকটা বিশাল কষ্ট ছিল ওদের। ভিডিও গেম কাকে বলে ওরা জানত না! তাই ওদের বাচ্চারা মাঠেঘাটে ছুটোছুটি করে খেলত। একজন পুলিশ সাজত আর বাকিরা চোর। পুলিশটা চোরদের পেছনে ছুটত ধরার জন্য আর চোররা মহানন্দে পালিয়ে বেড়াত! বাব্বা! কি পরিশ্রমের খেলা! আমাদের দেশের খেলায় বাবা অত পরিশ্রম নেই। এসি ঘরে বসে আঙুলের ক্লিকে দুম দুম করে একের পর এক চোরকে গুলি মেরে উড়িয়ে দাও, ব্যস! যেমন সোজা তেমন মজা!
একটা ব্যাপারেই আমাদের সঙ্গে ওদের মিল ছিল — সেটা দুর্গাপুজো। আমাদের মত ওরাও দুর্গাপুজো করত, নতুন জামা পরত আর তিনটে দিন আনন্দে কাটাত। তবে ওরা একটু অদ্ভুত ছিল তো, আর গরীবও, তাই ঘটাপটা বিশেষ হত না। আসলে টিভি, মোবাইল, কম্পিউটার, ইন্টারনেট এসব কিছুই ওরা জানত না, থাকার মধ্যে ছিল শুধু রেডিও। কাজেই নেটের পুজো কাকে বলে জানবে কি করে? আবার গরীব বলে বাড়িতেও পুজো করার উপায় ছিল না। তাই ওরা ওদের রাজ্যের বড় সর্দারের বাড়ির পুজোয় গিয়ে আনন্দ করত, ওখানে যা ভোগ রান্না হত একসঙ্গে মিলে খেত। ওই একটাই পুজো হত সারা রাজ্যে তাই সেটাই ছিল সবার পুজো। আমাদের মত কমপ্লেক্সে কমপ্লেক্সে পুজো ওদের হত না। তাছাড়া ওদের রাজ্যে না ছিল হোটেল রেস্টুরেন্ট, না শপিং মল। তাই নতুন জামা পরে একটু খিচুড়িভোগ খাওয়াতেই ওরা আনন্দ পেত। তারপর মুড়ি-বাতাসা রিটার্ন গিফ্ট নিয়ে সন্ধের আগে তাড়াতাড়ি করে যে যার বাড়ি ফিরে আসত। না না দুষ্টু লোকের ভয়ে না, দুষ্টু শেয়ালের ভয়ে। আসলে আমাদের যেমন গায়ে গায়ে মাল্টিস্টোরিজ, সেই দেশে ছিল গায়ে গায়ে ঘন গাছের জঙ্গল। আর সেই জঙ্গলে ছিল শেয়ালদের বাস। অন্ধকার নামলে হুক্কাহুয়া করতে করতে শেয়ালের দল বেরিয়ে পড়ত! জানো, আমি না কখনও real শেয়াল দেখিনি। প্লিজ গড, আমাদের কম্পাউন্ডেও একদিন শেয়াল বের করিয়ে দাও না, আমি টুক করে আমাদের 40th ফ্লোরের জানলা দিয়ে দেখে ভিডিও করে নিই!
ডিডা গল্প করে, পুজোর আগে মহালয়াটা নাকি ওদের ইউনিক হত। বাড়ির বাবা-কাকারা নদীতে গিয়ে কি সব আত্মা-টাত্মাদের পুজো করত । আর সারাদিন ধরে বাড়িতে চলত ফীস্ট। প্রতি বছর ওইদিন ভোর চারটেয় আবার নাকি রেডিওতে একটা গানের নাটক হত, যেটা সবার শোনা চাইই চাই । আমি অবশ্য ভেবে পাই না অত ভোরে ওঠার দরকার কি, রেকর্ড করে রেখে পরে উঠে দেখলে, সরি, শুনলেই হত। তবে হ্যাঁ, ওরা তো আবার রেকর্ড-ফেকর্ড করতে জানত না! তবে একই নাটক প্রতিবছর শুনে কি মজা কে জানে! তাও যদি টিভি প্রোগ্রামের মত একেক বছর একেক আর্টিস্ট হত বুঝতাম। তা ওরাই বা কি করবে, ওছাড়া তো এন্টারটেনমেন্ট বলে কিছু ছিল না বেচারাদের! তাই আমাদের যেমন টিভিতে আগের দিনের প্রোগ্রাম রিপিট হয়, ওদের তেমন একই প্রোগ্রাম ফি বছর রিপিট! তবে ডিডা বলে, পুজোর পর ওদের বিজয়াটা নাকি awesome। আমাদের মত বড় বড় দোকান ছিল না তো তাই ওরা বাড়িতেই খাবার বানাতো। ছোট নিমকি, বড় নিমকি, মালপোয়া, নারকোলের মিষ্টি, স-ব বাড়িতে! ভাবা যায়? মাকে যদি এইসব বাড়ি বসে বানাতে বলে কেউ ? সর্বনাশ! পুরো টার্মিনেটার 87 হয়ে যাবে!
তবে ডিডার মজার দেশের আজব গল্পে আমার favourite part, সেই রাজ্যের ডাডু-ডিডারা ছেলেমেয়েদের সঙ্গে এক বাড়িতে থাকত, এয়ারপোর্টে থাকত না । এখন যেমন আমরা দরকার পড়লে ওদের এয়ারপোর্ট থেকে নিয়ে আসি আবার কাজ মিটে গেলে এয়ারপোর্টে রেখে আসি, ওদের আজব দেশে সেই নিয়মটা ছিল না। ও হ্যাঁ জানো, ডাক্তার না বলেছে আমার একটা ভাই আসছে, শুনে মা বলল ডিডাকে আবার নিয়ে আসবে। ভালোই হবে, আমি আর ভাই তখন ডিডার কাছে আরও অনেক মজার মজার দেশের গল্প শুনব!
ওই রে, টার্মিনেটার 87 সরি মা ইন্টারকমে খেতে ডাকছে।
See you soon! Ciao!