উতলিকা হাউজিং কমপ্লেক্সের চল্লিশতম তলার ব্যালকনিতে বসে শ্যামলবাবু অতীতে হারিয়ে গেলেন এক দোলের দিনে। এখনকার ছেলে-মেয়েরা তো দোল খেলতেই জানে না। মেজো মেয়ে অরূণিমা গত পরশু এসেছে। সঙ্গে এসেছে বারো বছরের নাতি পাপ্পু। আবিরের বাটিটা হাতে নিয়ে শ্যামলবাবু ডাকলেন পাপ্পুকে, এই পাপ্পু, আয় একটু কাছে, তোকে একটু রঙ মাখিয়ে দিই।সে তো কিছুতেই রঙ মাখতে চায় না। বলে, না দাদু রঙ দিও না, মা বকবেন, রঙ মাখলে শরীর খারাপ করবে। শ্যামলবাবুর মনে পড়ে যায় ছোট বেলার কথা। তখনকার দিনে মা বাবারা এমন ভাবে ছেলেমেয়েদের তুতুবুতু করে রাখতেন না। বেলা আটটা নটা হলেই পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে ছোট শ্যামল বেরিয়ে পড়ত রঙ খেলতে। মা শুধু বলতেন, খালি পেটে বেরোস না, খেয়ে যা।
পাপ্পুকে গল্প শোনান দাদু ছোট বেলার, জানিস তো পাপ্পু, আমরা আবার বিকালে রাধা-কৃষ্ণ সেজে পাড়ার বাড়িতে বাড়িতে ঘুরতাম।
-তুমি কী সাজতে দাদু, রাধা না কৃষ্ণ?
-আমি তো ছোটবেলায় দেখতে অতটা ভাল ছিলাম না, তাই আমাকে রাধা বা কৃষ্ণ কোনটাই সাজাতো না।
পাপ্পু কৌতূহলী হয়ে জানতে চায়, বাড়ি বাড়ি ঘুরে কী করতে দাদু? দাদু জানালেন, রাধা-কৃষ্ণকে মাঝখানে রেখে আমরা গান করতাম ‘আজ হোলি খেলব শ্যাম তোমার সাথে’ আর সেই সঙ্গে নাচতাম। বাড়ির মসিমা কাকিমারা কী করতেন জানিস? ওনারা রাধা আর কৃষ্ণকে কোলে তুলে নিয়ে আদর করতেন, মিষ্টি খেতে দিতেন। মিষ্টি অবশ্য আমরা সবাই পেতাম। কেউ কেউ আবার আমাদের টাকা পয়সাও দিতেন।
-বাঃ বেশ মজার ব্যাপার তো, আচ্ছা দাদু ওই টাকা-পয়সা দিয়ে তোমরা কী করতে?
-আমরা পিকনিক করতাম। একবার কী হয়েছে জানিস?
কী দাদু? জানতে চায় পাপ্পু। দাদু জানালেন, একবার বাবা আমায় জিজ্ঞাসা করলেন, তোদের পিকনিকে কী কী রান্না হল? আমি বললাম ডাল, তরকারি আর মাংস। বাবা শুনে বললেন, সে কী রে? করেছিস কী? রাধা-কৃষ্ণ তো বৈষ্ণব, ওনারা তো মাছ মাংস খান না!