মাস খানেক আগে হৈ হৈ করে পৃথার সাথে রজতের বিয়েটা হয়েছিল ।রজত বোনের বিয়েতে পৃথাকে দেখেই পৃথার প্রেমে পড়ে গেছিল।সবে মাত্র চাকরি পাওয়া রজত পৃথাকে প্রেম নিবেদন করে ব্যর্থ হওয়ার কোনও চান্স নেয় নি ।রজত খুব ছোটবেলায় মা বাবাকে হারিয়েছে, তাই জেঠা জেম্মার কাছেই মানুষ।সেদিন রাতেই জেম্মার কাছে এসে বলেছিল রজত ।তারপর আর কোনো সমস্যায় পড়তে হয় নি ।রজতের জেঠা পৃথার বাবার খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু ।তাই দুই বাড়ির সম্মতিতেই বিয়েটা হয়েছিল হৈ হৈ করেই।
পৃথাকে নিয়ে হাজার হাজার স্বপ্ন দেখে গেছে রজত ।কিন্তু জেম্মার বারণ ছিল বিয়ের আগে ফোন বা মেলামেশা না করতে।রজত জেম্মার অবাধ্য কোনদিনই না ।মনে মনে স্বপ্ন দেখে গেছে আর অপেক্ষা করেছে পৃথাকে কাছে পাওয়ার ।কিন্তু বিয়ের পর পৃথার ব্যবহার বড্ড অবাক করত রজতকে।তাও মনকে বোঝাতে চাইত, হয়তো লজ্জা ।সব ঠিক হয়ে যাবে আস্তে আস্তে ।এইভাবেই বিয়ের আচার অনুষ্ঠান, নানান রকম কাজে কেটে গেল ছুটি ।
পৃথাকে নিয়ে রজত পাড়ি দিয়েছিল তার কর্মক্ষেত্র শিলিগুড়ি, ভালোবাসার ঘর বাঁধার জন্য । শিলিগুড়িতে বাড়ি ভাড়া নিয়ে রেখেছিল রজত ।প্রথম দুদিন অফিসও যায় নি, নতুন জায়গায় পৃথার একা লাগবে বলে ।কিন্তু পৃথার কিছুতেই উৎসাহ নেই ।কিছু জানতে চাইলেও চুপ করে থাকে ।সেদিন অফিস গেছিল রজত ।বিয়ের পর প্রথম গেছে – সবাই হাসি মজা করছে ।রজতের মোটেও ভালো লাগছে না ।পৃথা সারাদিনে রজতের ফোনও রিসিভ করে নি ।ক্লান্ত শরীরটা টানতে টানতে বাড়ি ফেরে রজত।ও কি, দরজা হাট করে খোলা ।বিছানায় পৃথার অচৈতন্য দেহ, মুখের কষ বেয়ে নেমে গেছে সাদা ফেনা । হাসপাতালের করিডর প্রায় জনমানবশূণ্য ।ঠান্ডায় হাত পা জমে যাচ্ছে ।পৃথাকে ও. টি. তে নিয়ে গেছে ওয়াশ করার জন্য ।রজতের কেমন যেন সব গুলিয়ে যাচ্ছে ।সিগারেটের প্যাকেট নিতে পকেটে হাত ভরতেই চিঠিটায় হাত পড়ল ।চিঠিটা খুলল অজানা কোন এক ভয়ংকর কাহিনীর সম্মুখীন হতে ।
রজত, তোমাকে আমি ঠকিয়েছি, ঠকাচ্ছি।জানি, তুমি আমাকে ভালোবাসো।কিন্তু আমি সেই ভালোবাসাকে নির্মম অবহেলার অত্যাচারে দগ্ধ করে চলেছি প্রতি নিয়ত ।আমি তোমার এই ভালোবাসার যোগ্য নই। আমি একজনকে ভালোবাসতাম ।আমার ছোট্টবেলার বন্ধু ।অবাধ যাতায়াত ছিল ওর আমাদের বাড়িতে ।ভালো লাগা আর ভালোবাসার মধ্যে তফাৎ করতে পারি নি ।অন্যায় হয়ে গেছে ।সবটুকু দিয়ে ফেলেছি আমি তাকে ।নোংরা হয়ে গেছি আমি ।তোমাকে দেওয়ার মত কিছুই নেই যে আমার । ভেবেছিলাম আর পাঁচজনের মত বিয়ের পর ভুলে যেতে পারব একটা দিনের স্মৃতি ।হয়ত পারতামও.. কিন্তু যেদিন থেকে বুঝতে পারলাম আমার গর্ভে বেড়ে উঠছে কারোর “ক্যাজুয়ালি কাছে আসার” দান – সেদিন থেকে নিজেকে ঘেন্না লাগে আমার । অনেক ভেবেছি, অনেক লড়াই করেছি নিজের মনের সাথে ।মানসিক টানাপোড়েনে আমি বড্ড ক্লান্ত হয়ে গেছি, আমি বিশ্রাম চাই ।তুমি খুব ভালো রজত – জানি, এই নিঃস্ব অসহায় মেয়েটাকে তুমি ক্ষমা করে দেবে । – – – – – পৃথা।
ডাক্তারবাবুর ডাকে চমকে উঠে রজত ।”আপনার ওয়াইফ এখন আউট অফ ডেনজার।বেডে দেওয়া হয়েছে, কিছুক্ষণের মধ্যেই জ্ঞান এসে যাবে ।তবে হ্যাঁ, ফিটার্সটাও ওয়াশ করতে হয়েছে ।ডোন্ট ওরি, কিছুদিনের মধ্যেই উনি নিশ্চয়ই মা হতে পারবেন ।”
রজতের চোখের কোণে জলটা গড়িয়েই পড়ল আর ভার সইতে না পেরে । বেডের পাশে বসে থাকতে থাকতে ভোরের দিকে চোখ লেগে গেছিল রজতের ।হঠাৎ জেগে দেখে পৃথা কাঁদছে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে ।কী করবে কিছু বুঝতে পারে না রজত ।নিজেকে আর সামলাতে পারে না ।আলতো করে পৃথার কপালে একটা চুমু দেয় রজত ।রজতকে অবাক করে পৃথা ঝাঁপিয়ে পড়ে রজতের বুকে, জমে থাকা কান্নার অঝোর বর্ষণে ধুয়ে নেয় নিজের সমস্ত ক্লেদ, গ্লানি, ধুয়ে দেয় রজতের বুকের ভেতরটাও।দূরে ওই পাহাড়ের চূড়ায় রোদ ঝিলমিল করছে, আর সেই আলোতে সূর্যোদয় হচ্ছে রজত-পৃথার নবজীবনে।।