আশ্রয়

(১) বাসমতী চালের ভাত, মাছের মাথা দিয়ে মুগডাল, ঝিরিঝিরি আলুভাজা, ধোকার ডালনা, দই পনীর, রুই মাছের কালিয়া, মুরগির মাংস আর চাটনি – এই ছিল আজকের মেনু।গতকাল ডাল, মাছ আর ধোকা করে রেখেছে। ফ্রিজ থেকে বের করে সবজি রাখা টেবিলের উপর; প্রায় ১১টা বেজে গেছে। স্নানভেজা চুলে তোয়ালে জড়িয়ে তাথৈ ভাবছিল কি করা উচিত তার। সকাল থেকে কেঁদে কেঁদে চোখ ফুলিয়েছে, মাথাটাও একটু ব্যাথা ব্যাথা করছে।এখন খুব ইচ্ছে করছে শুয়ে ঘুমতে – যা হয় হোক! এই ভাবনাটা এলেই আবার মনে হচ্ছে, বিকেলে কতজন আসবে, তাদের কি করে বারণ করবে?অনিচ্ছাসত্বেও বঁটি নিয়ে…

Read More

 গুহাপ্রবেশ

বাংলার আকাশে শীতকাল সমাসীন। ইতিউতি কুয়াশার কুন্ডলী আর রাস্তার ধারে আগুন জ্বালে হাত পা সেঁকে নেওয়ার দৃশ‍্য তারই ইঙ্গিতবাহী। হাওয়া মোরগেরও ঘুম ভাঙছেনা আলসেমিতে। তাই আজ পারদ পড়ল, কাল উঠবে, পরশু নামবে, কোঁকর কোঁ আওয়াজে জানতে পারছেনা কেউ। ভাদ্রের রোদে তাপ খাইয়ে, পেটের মধ‍্যে ন‍্যাপথলিন নিয়ে বসে থাকা সোয়েটার, মাফলারগুলো আলমারীর ঘুপচি কোণ ছেড়ে, গায়ে মাথায় উঠে বেশ একটা গ্রাম্ভারী লুক দিচ্ছে আজকাল। সবজি বাজার সবুজে সবুজ। প্রকৃতি হাত বাড়িয়ে সবাইকে বলছে, ‘এনজয় গুরু।’ ১ নধরকান্তি পোদ্দার। পঁয়ত্রিশ তলা এপার্টমেন্টের টপ ফ্লোরের বাসিন্দা। অকৃতদার, বেশ একটু নিরালা নির্জনে থাকবেন বলে,…

Read More

মাতৃত্ব

সকাল থেকে সুরমার মাথা ধরে আছে।কত কাজ , কী করে একা হাতে সব সামলাবে কে জানে ! বাড়ি ভর্তি লোক ,তাদের জলখাবারের ব্যবস্থা করা , পুলুর গায়ে হলুদের সমস্ত জোগার করা, সব দায়িত্ব সুরমার । সুদেব শুধু চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে বাড়ি মাত করবে আর ফোড়ন কাটবে , এটা হল না , ওটা হল না , ব্যস তার কাজ শেষ। সেই বিয়ের পর থেকে আজ প্রায় চল্লিশ বছর ধরে দেখে আসছে , লোকটা একটুও পাল্টালো না।কোনও কাজই দায়িত্ব নিয়ে একা করতে পারে না , শুধু ছাত্র পড়ান ছাড়া ।পাড়ার নাম করা অঙ্কের…

Read More

পূর্ণতা

অ্যাসাইলামের দোতলা থেকে সামান্য একটু আকাশ দেখা যায় ।সেই আকাশে মেঘ জমেছে ।মেঘ দেখলেই গীতের পাগলামিটা বাড়ে।কে জানে মেঘ কী কেড়ে নেওয়ার স্মৃতি মনে করিয়ে দেয় মেয়েটাকে ।নিজের চেম্বারে বসে ভাবছিলেন ডাক্তার মাইকেল ডিসুজা। পুরুলিয়ার ছোট্ট একটা গ্রাম, পাহাড়ের গায়ে ।ডাক্তার ডিসুজা প্রায় ২০ বছর আগে এখানে এসেছিলেন স্বেচ্ছানির্বাসনে।তার মত বিখ্যাত সাইক্রিয়াটিস্ট কলকাতায় প্রাকটিস করলে এতদিনে কোটিপতি হয়ে যেত ।কিন্তু তিনি এই প্রত্যন্ত গ্রামে এন. জি. ও-এর হয়ে সামান্য বেতনে জীবন কাটিয়ে দিলেন । কত কেস ই তো দেখলেন.. গীতের মত কাউকে দেখেন নি আগে ।বড় মায়া পড়ে গেছে মেয়েটার…

Read More

শিকড়

মরতে গিয়েও মরতে পারিনি। আমি মরে গেলে মৌসুমী আর মেয়েটা ভেসে যাবে। ওদের মুখে হাসি ফোটানোর সামর্থ্য নেই আমার, তাই বলে নিজে পালিয়ে গিয়ে ওদের অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে ছুঁড়ে ফেলি কী করে…আমি তথাগত সেন। সামান্য এক সেলসম্যান। চারদিক থেকে দেনার দায়ে ডুবে আছি। কাল হয়তো চাকরিটাও থাকবে না। ঘরে ফিরে মৌসুমীকে কি বলব জানিনা। ও বরাবরই চুপচাপ। কোন অভিযোগ নেই ওর। কিন্তু আমাদের মেয়েটার ভবিষ্যৎ চিন্তায় ওকে আজকাল খুব রুগ্ন দেখায়। দিলীপ দার কথামতো সেদিন এক জ্যোতিষীর কাছেও গেছিলাম। সে যা সব পাথর ধারণ করতে বলল, তা কেনার ক্ষমতাও আমার…

Read More

ত্রিতাল – অথবাতিনতালকানারগল্প

।।১।। এই যে এত বছর কর্পোরেট জগতে চরে খাচ্ছি, একটা জিনিস কিন্তু শুরু থেকেই দেখেছি। পুরুষ সহকর্মীরা মহিলাদের সাথে মেলামেশায় রীতিমত সতর্ক থাকেন। ব্যতিক্রম নেই বলছি না, কথাবার্তায় অতি ঘনিষ্ঠ ভাব দেখানো, ছুতোনাতায় গায়ে ছুঁয়ে যাওয়া, বাসে পাশে বসলে গোপালের প্রসাদ দেবার নামে বুকে কনুই ঠেকানো – এসব একদম যে হয়নি তা বলব না কিন্তু সেগুলো বিচ্ছিন্ন ব্যতিক্রমই, আমি একেবারে জুনিয়র থাকতে, এবং এইচ আর কে জানানোর পর এসব বদ লোক বেশিদিন কোম্পানিতে টেঁকেনি। একটু পোক্ত হবার পর, এসব নিয়ে আর একেবারেই মাথা ঘামাতে হয়নি। হয়তো আমি যখন থেকে কাজ…

Read More

অপ্রেমপত্র (দ্বিতীয় অংশ)

জীবনের মরুভূমিতে অনেকটা পথ দিকভ্রান্ত তৃষ্ণার্ত পথিকের মত ঘুরে হঠাৎ জলের সন্ধান পেয়েছিলাম যেদিন সেদিন ঠিক ভুল বিচার না করেই আঁজলা ভরে আকণ্ঠ জল পান করেছিলাম পিপাসা মেটাতে ।আজ ভেবে পাই না,মৃত্যুমুখী তৃষ্ণা নিবারক সেই জলেই বিষ ছিল,নাকি সেই অমৃত ধারা আমার বিষাক্ত সংস্পর্শে এসে তীব্র বিষে পরিণত হয়েছে ।একবার ভালোবাসার সাথে দিন যাপনের অভ্যাস হয়ে গেলে সেই ভালোবাসাকে ভুলে থাকা বোধহয় অসম্ভব ।তাই বারবার, বরাবর আগলে রাখতেই চেয়েছি ।চাওয়া পাওয়া, অভিমান, অভিযোগ, দাবি, খারাপ লাগা – সমস্ত বোধকে মহীরুহ অস্তিত্ব থেকে ছাঁটাই করে বনসাই – এর আকার দিয়েছি—-শুধু সম্পর্কটা…

Read More

নেশা

শাওয়ারের জলে গা ভেজাতে ভেজাতে মনটা হঠাৎ চিন্তাটা আসে, মনটা ছ্যাঁত করে ওঠে ব্রতীনের; এমনটা কি হওয়া সম্ভব? মনে মনে ঠিক করে, আজ একবার পরীক্ষা করে দেখবে….. নিজের ভেতর অসম্ভব এক আত্মগ্লানি অনুভব করল, জলের মধ্যে থেকেও সেই অনুভুতি ভেসে গেল না….ব্রতীন, ডালহৌসির সরকারি অফিসের এক পদস্থ অফিসার; বাবা মারা যাবার পর তার চাকরিটাই পেয়েছে। কম বয়সে সংসারের ভার নেবার ফলে, বিয়েটা করা হয় নি। ছোট ভাই “অহি” কে সে নিজের ছেলের মতন মানুষ করেছে, সে নিজে যা যা করতে পারে নি…. সব ভাইএর জন্য করেছে; অহিকে কখনও কোনও অভাব…

Read More

শেষ দেখা

সবাই বলে 13 তারিখ তা নাকি অশুভ , কিন্তু আমার জীবনে এই 13তারিখ তা খুুুব মধুর। 2017 সালের 13ই আগস্ট হঠাৎ একটা মিষ্টি দেখতে মেয়ের বন্ধুুত্বর প্রস্তাবনা  ফেসবুক পাতায়।কে ঠিক চিনতে পারছিলাম না । পরে জানলাম ভালো নাম দেবশ্রী। আমি এমন এক পরিবার থেকে মানুষ হয়েছি কিনা ভীষণ সংরক্ষিত সবার সাথে মিশতে ভয় হতো বিশেষ করে মেয়েদের সাথে। তাই আমার বন্ধু মহলে প্রায় সবার কাছে হাসস্পদ হতে হতে হয়েছিল। তাই আমার বন্ধু বলতে গান , আকা, বইপড়া এদের নিয়েই চলে গেছে এতগুলো বছর। তাই ফেসবুক  থেকে এই মেয়েটি যখন জানলো…

Read More

সফটি

সকাল থেকে সফটি ব্যস্ত, বাড়িতে অনেক কাজ আর মহিলা বলতে ও একা ।স্কুলেও যাচ্ছে না কদিন ধরে। পুরহিত মশাই আসার আগে সব জোগার জাতি করে ফেলতে হবে।আজ মানির শ্রাদ্ধ। মানি ওর ঠাকুমা।জ্ঞান হবার পর থেকেই সফটি দেখে আসছে মানিই ওর সব। খাওয়ানো ,স্নান করানো, ঘুম পারানো, স্কুলের বাসে তুলে দেওয়া সব ,নাচের শিক্ষিকা খোঁজা ,সব কিছুতে মানি ।কত অত্যাচার না করেছে মানির ওপর, সব মুখ বুজে সহ্য করত মানি। বাবা মার ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় যখন , তখন সফটির মাত্র ২বছর বয়স , এক আয়া মাসি ছিল আর ভরসা ছিল মানি।…

Read More
Page 1 of 8
1 2 3 8