দুই বন্ধু মিলে শুরু করছি একটা Online Magazine. প্রথম থেকেই মাথায় ছিল, প্রতিটা সংখ্যায় এক জন বিশেষ ব্যাক্তিত্বর সাক্ষাৎকার থাকবে। তবে, প্রথম সংখ্যায় কে থাকবে, তা নিয়ে বেশ চিন্তা ছিল। আমরা দু জনেই সৃজিত মুখার্জী র ছবির ভক্ত। হঠাৎ জানতে পারলাম, আমার Facebook friend দেবিকার খুব ভালো বন্ধু হল ঋজু, ওরফে সৃজিত। দেবিকা কে অনুরোধ করলাম যদি একটা interview এর ব্যবস্থা করা যায়…
দেবিকা কে আমাদের অজস্র ধন্যবাদ, পেলাম সৃজিত এর ফোন নম্বর। প্রথমে WhatsApp এ মেসেজ করে জানতে চাই ফোন এ কথা বলার উপযুক্ত সময় … প্রথম মেসেজ এর উত্তর টা যখন এল, নিজের চোখ কেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। ফোনে কথা বলার সময় শুরু হওয়া বুক ঢিপ ঢিপ চলেছিল ফোন রেখে দেবার পর অনেকক্ষন ধরেই।জানতে পারলাম, উনি মুম্বাই তে। জানালেন, কলকাতায় এলে যোগাযোগ করতে।
‘জুলফিকার’ এর ডাবিং এর মাঝে, দক্ষিন কোলকাতার এক স্টুডিয়ো তে সময় পেলাম দেখা করার। জীবনের প্রথম Interview নেওয়া, তাও আবার সৃজিত মুখার্জী র। প্রচণ্ড tension এবং excitement নিয়ে পৌঁছে গেলাম সময় মত, সাথে camera আর recorder.
Canvas paint এর কালো T-Shirt পরে সামনে এসে বসলেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত পরিচালক। খাতায় তৈরি করে নিয়ে আসা প্রশ্নগুলো বড্ড অনভিজ্ঞতার পরিচয় দিতে পারে, আগে ভাগে জানিয়ে দিলাম।
কথা শুরু হল ছোটবেলা নিয়ে……
…………
WishScript: – আপনার ছোটবেলার কথা কিছু বলুন।
সৃজিতঃ আমার ছোটবেলা কেটেছে ভবানীপুর অঞ্চলে।’৭৭ এ জন্ম। ’৭৭ থেকে ’৯২ আমি ভবানীপুরেই ছিলাম। ৫ নম্বর ইন্দ্ররায় রোড এ থাকতাম – ওটাকে সিনেমা পাড়া বলা হত; ভারতী, বিজলী, ইন্দিরা, পূর্ণ এই চারটে সিনেমা হল এর mid point e ছিল আমাদের বাড়ি। কাছাকাছি ছিল বসুশ্রী, উজ্জ্বলা আর কালীকা। মোটামুটি ৭টা সিনেমা হল পরিবেষ্টিত একটা পাড়ায় আমার জন্ম।
WishScript: বাহ! এইখানথেকেই বোধহয় সিনেমাপ্রীতি?
সৃজিতঃ (হাসি) দেড় মাস যখন বয়স, মা-বাবা আমায় নিয়ে দেখতে গিয়েছিল ঋত্বিক ঘটকের “যুক্তি-তক্কো-গপ্পো”, তারপর পূর্ণয় “শোলে”, তখন ৪ কি ৫ বছর বয়স।
WishScript: তার মানে সিনেমার সাথেই বড় হয়ে ওঠা ?
সৃজিতঃ আমার বড় হয়ে ওঠাটা খুব interesting। আমাদের যে গলিতে বাড়ী ছিল, সেই গলির মুখে বিশাল এক পাঞ্জাবী community ছিল। ’৮৪ র Riot-এর সময় প্রথম দেখলাম, পুরো স্তব্ধ সেই গলি – তারা সেই সময় নিশ্চুপ হয়ে গিয়েছিল।এছাড়া খুব শব্দবহুল , ঘটনাবহুল ছিল আমাদের সেই ইন্দ্ররায় রোড এর গলি। মনে আছে, night show ভাঙার পর প্রেমিক-প্রেমিকারা ঝগড়া করতেন সেই গলিতে ঢুকে – তাদের ঝগড়ার শব্দ এখনও কানে বাজে।গলিতে ক্রিকেট খেলা হত; গ্যারেজের বাচ্চাদের সাথে ক্রিকেট খেলা, রাস্তার দু পাশের নালা থেকে বল কোড়ানো, সেখান থেকে খেলতে খেলতে শুরু – খুব interesting একটা বসতি ছিল সেখানে – মানে, নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত, বস্তি এবং উচ্চমধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত এই সবধরনের বসতি ছিল। |
![]() |
কৃষ্টিগত ভাবে, ভাষাগত ভাবে খুব interesting বড় হয়ে ওঠা হয়েছে আমার।খিস্তি-খেঁউড়ের মধ্যেও,রবীন্দ্রনাথের মধ্যেও,বঙ্কিমচন্দ্রের মধ্যেও,পরশুরামের মধ্যেও।
WishScript: একটু আপনার পরিবারের কথা বলুন।
সৃজিতঃ আমার বাবা মা দুজনেই professor। বাবা Jadavpur University তে Architecture এর HOD ছিলেন, মা Anatomy র HOD ছিলেন Calcutta Medical College এর। তাই পড়াশোনার atmosphere বাড়ীতে ছিল। আমার ঠাকুরদা নামকরা professor ছিলেন কুরুক্ষেত্র University র- Organic Chemistry র একজন বড় নাম। So, পড়াশোনা, পড়ানো, professor, academics – এই atmosphere টা সব সময় বাড়ীতে ছিল। তার মধ্যেই বড় হয়ে ওঠা।
WishScript: তাহলে, সিনেমা আর পড়াশোনা ……
সৃজিতঃ না, শুধু তাই নয়, গান-বাজনা- নাটকের একটা আবহাওয়াও ছিল। সিনেমা দেখার একটা পরিবেশ তো মা বাবার জন্য তৈরিই হয়ে গিয়েছিল। So, সব মিলিয়ে জমজমাটি বড় হয়ে ওঠা।
WishScript: কিছু স্মৃতি ?
সৃজিতঃ আমার মনে আছে, আমাদের বাড়ীতে খুব গানের আসর বসত। আমার পিসী আরতী মুখোপাধ্যায়। She is very close to me, আমায় খুব ভালবাসেন, বাড়ীতে আসতেন। গানের প্রচুর আড্ডা মনে আছে, মজলিশ মনে আছে। ভবানীপুর কৃষ্টিগত ভাবে একটা খুব rich জায়গা। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় concert করছেন, জলসা করছেন… মনে আছে।
WishScript: স্কুল, কলেজ, বন্ধু – যোগাযোগ আছে?
সৃজিতঃ ছোটবেলায় Dolna Day School এ পড়েছি। ছোটবেলার বন্ধু মানে, স্কুলের বন্ধু, দোলনার বন্ধু … কয়েকজনের সাথে এখনও যোগাযোগ আছে। পাড়ার বন্ধু দু-এক জনের সাথে যোগাযোগ আছে। Tournament খেলতে যেতাম, ক্রিকেট খেলতাম, ফুটবল খেলতাম। পরবর্তীকালে , Class XI – XII ,South Point এ – ওখানকার বন্ধু। তারপর, Presidency College.
WishScript: তার মানে তো, প্রচুর বন্ধু …
সৃজিতঃ হ্যাঁ, অনেক বন্ধু। আমি যে Economics পড়ব,তা নির্ধারণ করেছিল আমার বন্ধুরা। আমি যে Economics পড়ব,তা নির্ধারণ করেছিল আমার বন্ধুরা। মানে, সবাই এটা পড়ছে, ওটা পড়ছে, আর আমি কিছু একটা পড়লেই হল – এই রকম একটা ব্যাপার আর কি! আর, আমার কাছের বন্ধুরা কি করছে – কোথায় যাচ্ছে? না, দিল্লী তে যাচ্ছে – JNUর পরীক্ষা দিতে, MSES দিতে বা ISAT দিতে। তো আমিও দিল্লী যাই।So, সেই ভাবেই সবাই মিলে একসাথে গিয়ে দিল্লীর পরীক্ষা দেওয়া। Delhi School of Economics এ পেয়েছিলাম, JNU তেও পেয়েছিলাম। কিন্তু পরবর্তীকালে JNU টাই decide করি, কারণ, campus টা অবিশ্বাস্য campus ছিল। ওই campus ছেড়ে অন্য কোথাও যাতে ইচ্ছে করে না।
WishScript: লেখেন কখন?
সৃজিতঃ লিখি ওই গল্প পেলে। গল্প পায়, চিন্তা পায়, চরিত্র-ঘটনা পায়। সেগুলো পেলে লিখি। নিয়ম করে যে লিখতে বসা হয়,তা নয়।কিন্তু, খুব ঘনঘন পোয়াতি হচ্ছি কয়েক বছর। So, সে যায়গা থেকে গল্পের কোনও অভাব হচ্ছে না। একটার পর একটা গল্প আসছে, গল্প লিখছি, করছি – বাংলা, এরপর হিন্দী তে শুরু করব June মাসে। So, এই আর কি।
WishScript: কবে থেকে লেখাটা শুরু?
সৃজিতঃ লেখাটা বহু আগেই, in fact আমার মনে আছে বহু ছোটবেলা থেকেই কবিতা লিখতাম, ছোট গল্প লিখতাম, অনুবাদ করতাম। Lewis Carol এর “The Walrus and the carpenter” বলে একটা কবিতা আছে, সেইটা অনুবাদ করেছিলাম class VI/VII এ এবং ছন্দে অনুবাদ করেছিলাম।
WishScript: পুরনো লেখাগুলো কি কিছু পাওয়া যেতে পারে?
সৃজিতঃ খুঁজতে হবে, জানি না, দেখতে হবে। মানে। আমার কাছে actually নেই, থাকার chances আছে বিভিন্ন স্কুলের বন্ধুদের কাছে বা স্কুল এ। আমার বাড়ীটা actually বই-খাতা-পত্র সব নিয়ে এমন mess হয়ে আছে ………
WishScript: মানে, ভাবছিলাম, যদি অতদিন আগেকার এক সৃজিত মুখার্জী কে পাওয়া যেত …
সৃজিতঃ ওই ভাবে কখনো ভাবি নি। আমি actually খুব যে একটা সংরক্ষণে বিশ্বাসী, তা নয়।
WishScript: আপনি তো lyrics ও লিখতেন?
সৃজিতঃ Lyrics আমি লিখতাম, বরাবরই লিখতাম। কবিতার lyrics, গানের lyrics। বেশ কিছু জনপ্রিয়ও হয়েছিল। সেই দিয়েই তো যাত্রা শুরু।
তবে, তার আগে আমি নাটক লিখেছি। Delhi এবং Bangalore এ আমি অনেক নাটক লিখেছিলাম, করেছিলাম, পরিচালনা করেছিলাম। In fact, Bangalore শহরে আমার পরিচিতি কিন্তু থিয়েটার বা stage অভিনেতা হিসেবেই।
WishScript: অনুপম রায় এর সাথে তো আপনার আলাপ Bangalore এই?
সৃজিতঃ হ্যাঁ, অনুপম এর সাথে আমার আলাপ Bangalore এই তবে নাটকের সূত্রে নয়।
অনুপম এর সাথে আলাপ আমার রঞ্জন ঘোষালের (Founder member of বাংলা ব্যান্ড “মহীনের ঘোড়াগুলি”)সূত্রে। Actually, হ্যাঁ, বলতেই পারো নাটকের সূত্রে – রঞ্জন দা-র সাথে অনেক নাটক করেছি, প্রচুর নাটক direct করেছি, অভিনয় করেছি।
Gulshan Devaiah(Hunterr, Hate Story খ্যাত)এখন যিনি খুব নাম করেছেন অভিনয় করে মুম্বাই তে, তার সঙ্গে আমার আলাপ হয় নাটকের সূত্রে Bangalore এ।
Abhishek Majumdar (the Co-founder of Indian Ensemble),এখন ভারতবর্ষে নতুন প্রজন্মের নাট্যকারদের মধ্যে সবচেয়ে উজ্জ্বল নাম যার, তার সাথেও নাটক করি Bangalore এ।
Bangalore এপিসোড টা সত্যি আমার জীবনে একটা turning point. অনেক interesting লোকজনের সাথে আলাপ পরিচয়; এবং সাহস পাই যে, কোন এক দিন দুম করে চাকরি ছেড়ে নাটক করার।
WishScript: আপনি তো ফেলুদা এবং ব্যোমকেশ কে নিয়েও নাটক লিখেছেন?
সৃজিতঃ হ্যাঁ, ‘ফেলুদা ফেরত’ বলে একটা নাটক করেছি, পরবর্তীকালে, ব্যোমকেশ এর নাটক করেছি ‘Check Mate’ বলে। তারপর…… lyrics লেখা, এরপর অপর্ণা সেন ও অঞ্জন দত্ত কে assist করা, করে তারপর eventually “অটোগ্রাফ”।
WishScript: কোন ছবিটা বানিয়ে আপনি সবচেয়ে বেশী satisfied?
সৃজিতঃ আমি আমার কোন কাজেই satisfied নই। তবে, সবচেয়ে কম অখুশি যদি বলা যায়, অখুশি হবার departmentগুলো কিন্তু আবার আলাদা …… তো, বাইশে শ্রাবণ, চতুষ্কোণ, জাতিস্বর এবং রাজকাহিনী – এই চারটে কাজে আমি সবচেয়ে কম অখুশি, নানান দিক থেকে।
WishScript: কার লেখা পড়তে বেশী ভালো লাগে?
সৃজিতঃ প্রচণ্ড পছন্দ পরশুরাম, রবীন্দ্রনাথ , নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় , শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় , আমিতাভ ঘোষ , Salman Rushdie, Agatha Christie, Jeffrey Archer, George Bernard Shaw, Louise Albert ……. অনেক আছে ……
WishScript: এখন কি পড়ছেন ?
সৃজিতঃ বই-এর মধ্যে এখন আর কিছু পড়ার সময় পাচ্ছি না । কারণ, হিন্দী ছবির Pre-Production চলছে, জুলফিকার-এর Post-Production চলছে। জুলফিকার একটা mammoth project – বিশাল একটা প্রোজেক্ট। Shakespeare –এর দুটো নাটক কে এক করে সেতাকে কোলকাতার underworld-এর ছাঁচে ফেলে – মানে এটা একটা যে খুব ভয়ঙ্কর একটা প্রোজেক্ট আআর কি – এটা নিয়েই নাভিশ্বাস উঠছে। এই তো Dubbing চলছে (সে দিন Rahul এর ডাবিং ছিল – এক ঝলক তার সাথেও দেখা হল আমাদের)। এটা করেই, বম্বে ছুটতে হবে।বম্বেতেও আর কিছু কাজ আসছে। সেই কাজগুলোকেও করতে হবে। আপাততঃ বেগমজান দিয়ে শুরু , বেগমজানের পর পরবর্তীকালে ……
WishScript: Anurag Kashyap এর সাথে ……?
সৃজিতঃ Anurag Kashyap নয়, Fantom এর সাথে , Anurag, Vikramaditya Motwane, Vivek Behl – ওদের যে গ্রুপটা আছে, তারা Hemlock নিয়ে একটু interest দেখিয়েছে …… তাই নিয়ে কথাবার্তা চলছে। Hemlock অলরেডি কিন্তু মারাঠি তে হয়ে গেছে , মারাঠি তে Hemlock –এর রিমেক হয়েছে, so ….
এটা একটা গর্বের কথা যে, যে বাংলা ছবি ‘৯০ – ২০০০ সালে South Indian Film –এর রিমেকের উপর দাঁড়িয়ে ছিল, এখন সেই বাংলা ছবির আবার রিমেক শুরু হয়েছে।
…………(ক্রমশঃ)