মাচুপিচু র ইতিহাস বলতে গেলে ইনকা দের ইতিহাস বলতে হয়। যতটা ছোট করে লেখা যায় চেষ্টা করছি। মাচুপিচু কথা টার মানে – Machu মানে পুরনো আর Picchu মানে পাহাড় । আমাজন এর জঙ্গলে ঘেরা এই ছোট দেশ পেরু। সব চেয়ে অবাক করা কথা হলো, আন্দিজ পর্বত মালার ৮০০০ ফুট উঁচুতে তখন কার ইনকা সম্প্রদায় এর মানুষ্ রা এরকম একটা অদ্ভুত শহর কি করে বা কেন বানালো। একটা কথা মনে রাখা দরকার যখন মাচুপিচু শহর টি তৈরী হয় তখন ইনকা রা লোহার ব্যবহার জানত না আর চাকার ও আবিস্কার করতে পারেনি, কোনো লিখিত ভাসা ওদের ছিল না। ওদের একটাই অঙ্ক করার কায়দা ছিল যেটার নাম কিপু (Quipus) যেখানে অনেক রং এর সুতো ব্যবহার হত এবং তাতে গিট্ দেয়া হত , গিট্ এর সংখা ও সুতোর রং মানে কোন সুতোতে গিট্ দেয়া হযেছে সেটা দিয় হিসাব হত। মনে করা হয় রাজা Pachakari বা Pachacuti (Pachakari শব্দের মানে – যিনি পৃথিবী কে পরিবর্তন করেন ) র আদেশে এই শহর গড়ে তোলা হয়। অনেকে মনে করেন Pachakari খুব বড় ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন আরেক দিকে রাজা ও। এখানে ২০০ টি বাড়ি ও কিছু মন্দির বানানো হযেছিল ashlar নামক একটি পদ্ধতি তে। Ashlar পদ্ধতি তে পাথর এর ওপর পাথর নিখুত ভাবে বসিয়ে বাড়ি বানানো হয়। দুটি পাথরের মাঝে সিমেন্ট বা মাটি কিছুই ব্যবহার করা হয় না। এই পদ্ধতি তে শহর গড়ার কারন, মাচুপিচু এমন জায়গায় অবস্থিত যেখানে মাঝে মধ্যেই ভূমিকম্প হয়। ভূমিকম্প হলেও এই পদ্ধতি তে তৈরী বাড়ি ভেঙ্গে পড়ে না কারণ পাথর গুলি নিজের মত নড়াচড়া করতে পারে এবং যে যার নিজের জায়গা তেই থাকে।
পেরু দেশে এই পদ্ধতি তে ইনকা রা পাহাড়ি জায়গাতে ধাপ চাষ ও সুরু করেন। সব থেকে মজার কথা তখন ইনকারা যে পরিমান জমি চাষ করতেন , বর্তমান পেরু তে তার থেকে কম জমিতে চাষাবাদ করা হয়। যাই হোক এই মাচুপিচু র পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে একটা নদী যার নাম উরুবাম্বা। দারুন সুন্দর এই নদী এঁকেবেঁকে আমাজন এর জঙ্গল কে চিরে ফেলেছে। ১৯১১ সালে এক মার্কিন প্রত্নতত্ত্ব বিদ Hiram Bingham একটি গাছের ওপর হামাগুড়ি দিয়ে এই নদী পেরিয়ে এসে পড়েন এই পাহাড়ের পাদদেশে এবং এক ইন্ডিয়ান (সাদা চামড়ার মানুস রা এখানকার আদি বাসিন্দা দের ইন্ডিয়ান বলেই ডাকে ) বাচ্ছা ছেলের দেখানো রাস্তায় গিয়ে পৌঁছোন মাচুপিচু র মাথায়। পুনরায় আবিস্কার হলো মাচুপিচু , তোলপাড় সুরু হলো আজকের উন্নত জগতে। ইনকা দের ইতিহাস খোঁজা শুরু হলো। জানা গেল ১৫৩২ সালে এক লোভি স্প্যানিশ যুদ্ধ বাজ Francisco Pizarro সোনার লোভে ২০০ সৈনিক নিয়ে হাজির হন এবং এই স্প্যানিশ দের কাছে ছিল উন্নত অস্ত্র – বল্লম ,তির ধনুক , স্টিল এর তলোয়ার আর ইনকা দের ছিল গাছের ডালের ওপর বাঁধা পাথরের টুকরো যাকে বলা যায় পাথরের হাতুড়ি। স্প্যানিশ রা সহজেই ২০০০ ইনকা সেনা কে পরাস্ত করে এবং যতজন কে সম্ভব মেরে ফেলে , ইনকা স্থাপত্য ধ্বংস করে কারণ স্প্যানিশ দের দরকার ছিল সূর্য দেবের গায়ের ঘাম , ইনকা রা সোনা কে বলতেন sweat of sun god . স্প্যানিশ রা প্রথম বার ফিরে যাবার পর ইনকা দের মধ্যে ইউরোপিয়ান রোগ স্মল পক্স মহামারীর মত ছড়িয়ে পড়ে এবং মৃত্যুর হার এতটাই বেড়ে যায় যে ইনকারা প্রায় অবলুপ্তির পথে পা বাড়ায়।