(Nov 2006)
দুদিন অগে হাঁটা শুরু করেছিলাম মানেভঞ্জন থেকে , উদ্দেশ্য ছিল সান্দাকফু যাবো। প্রথম রাতটা কাটিয়েছি চিত্রের হোমস্টেতে (এটি মানেভঞ্জন থেকে সান্দাকফুর রাস্তায় ) আর দ্বিতীয় রাতের জন্য বেছে নিলাম টংলুর এই ট্রেকার্স হাট । একটা পাহাড়ের মাথায় ফাঁকা মাঠে একমাত্র ট্রেকার্স হাট। আশপাশ এবং সামনে মরা ঘাসের হলুদ ভ্যালি। কিছুদিন আগে বরফ পড়ে সবুজ ঘাসগুলো মরে হলুদ হয়েছে। বিকালের লালচে আলোতে হুহু করে উড়ে আসা বরফের মতো ঠান্ডা হওয়া বাইরে বেরোতে দিচ্ছে না ,নাকের ডগাটা অসাড় হয়েছে। আমি যে চেষ্টা করলেই ভালো ছুতোর মিস্তিরি হতে পারতাম সেটা বুঝলাম, যখন আমি আমার থাকার ঘর এর জানলার ভাঙা কাঁচটা খবরের কাগজ , আর টুকরো কার্ডবোর্ড দিয়ে মেরামত করে ফেললাম। এই ঠান্ডায় সবথেকে ভালো হচ্ছে রান্নাঘরে বসে আড্ডা দেওয়া। আমার পায়ের কাছে যে বেড়ালটা ঘুরছিলো সেটাকে কোলে তুলে নিয়ে চললাম রান্নাঘরের দিকে | গিয়ে দেখি আগে থেকেই বেশ জমিয়ে আড্ডা চলছে। বসে গেলাম একটা তংবা নিয়ে। এটা একটা নেপালি মদ বা ওই জাতীয় পানীয়র নাম | একটা মোটা বাঁশের গেলাসে যতদূর সম্ভব মিলেট জাতীয় কিছুর বীজ দিয়ে ভরা থাকে , ওটার ওপর হালকা গরম জল ঢালা হয় এবং আরেকটা সরু বাঁশের পাইপ দিয়ে ওই জল আস্তে আস্তে খেতে হয়।একটু কষা আর বাঁশের গন্ধ মেশানো গরম পানীয় , হালকা নেশা হয় আর ঠান্ডাটা একটু কম লাগে । আমার ঘরে আমি ছাড়া আর তিন বিদেশী অতিথি থাকবেন , তাঁদের সঙ্গে আলাপ জমালাম , জানলাম তাঁরা সাত সমুদ্র তেরো নদী পেরিয়ে আমেরিকা থেকে এখানে এসে পড়েছেন, হিমালয়ের টানে। এখানে রাত ৯টা মানে বেশ অনেক রাত। কিছুক্ষন পর শুতে গিয়ে দেখি আমার তিন বিদেশী সঙ্গী শুয়ে পড়েছেন এবং বিছানার তলায় একটা লোহার সরাতে আগুনে লাল হয়ে থাকা কয়লা দেওয়া আছে। এতেও ঘর বিশেষ গরম হয়নি , বাইরে যথেষ্ট ঠান্ডা। মনে মনে ভাবলাম যা হয় মঙ্গলের জন্যই , ভাগ্যিস জানলার কাঁচটা ভাঙা ছিল | তিনটে বিদেশী আর একটা দেশি, চারটে করে কম্বল চাপা দিয়ে ভস ভস করে সারা রাত ধরে গাদা গাদা কার্বন ডাই অক্সাইড ছাড়বো আর তার সঙ্গে কয়লাও পুড়ে আরো বিষ ছড়িয়ে মরার ব্যাবস্থাটা পাকা করবে । কোনো আওয়াজ না করে নিঃশব্দে জানলার কাছে গিয়ে কাগজটায় দু আঙুলের মাপে একটা ফুটো করে দিলাম।
সকালবেলাটা পাহাড়ি অঞ্চলে আবহাওয়া বেশ সুন্দর থাকে , চারদিক বেশ পরিষ্কার দেখা যায়। মরা ঘাসের মাথায় গুঁড়ো গুঁড়ো সামান্য বরফ এখনো একটু আধটু রয়ে গেছে। একটু হাঁটাহাঁটি করে আড়মোড়া ভাঙার সময় মনে হলো ,একটা কাউবয় মার্কা ড্রেস, একটা দোনলা বন্দুক (গুলি না থাকলেও চলবে ) আর একটা ঘোড়া পেলে বেশ হতো ।The Good, the Bad and the Ugly সিনেমার Clint Eastwood এর সঙ্গে নিজের একটা মিল তৈরী করলাম।কিন্তু ওই কঠিন মুখওয়ালা চুরুট চিবোনো দস্যু এখানে পাওয়া যাবেনা।বেশি সময় নষ্ট না করে বেরিয়ে পড়লাম সান্দাকফুর দিকে। টংলু থেকে তুম্বলিং একটুখানি রাস্তা প্রায় ১.৫ কিমি হবে। বেশ তাড়াতাড়ি পৌঁছে গেলাম নীলাদির হোটেলে। চা বিস্কুট আর একটু
আড্ডার পর আবার হাঁটা লাগলাম। তুম্বলিং থেকে রাস্তা Y এর মতো দু ভাগে ভাগ হয়েছে , এর বাঁ দিক দিয়ে একটু হেঁটে গেলে আবার বাঁ দিকে একটা অব্যবহার্য রাস্তা পাওয়া যায় , এই রাস্তা একটু ঘুরপথে তুম্বলিং ফটক পৌঁছয়। এ রাস্তাটার বাঁ দিকে বিশাল ভ্যালি আর খাদ | দারুন লাগে দেখতে। এই রাস্তাটায় পাথর নেই তাই বেশ আরাম লাগে নরম মাটির ওপর দিয়ে হাঁটতে। জীপ গাড়ি যাবার মতো দুটো পাশাপাশি মাটির দাগ বেঁকে বেঁকে চলেগেছে সামনের দিকে | কিছুটা গিয়ে রাস্তাটা উল্টোনো U অক্ষরের মতো বেঁকে গেছে তুম্বলিং ফটকের দিকে। এদিকের রাস্তাতে খুব একটা চড়াই নেই, ওই মাঝে মধ্যে একটু আধটু , চোখের সামনে পাহাড় কখনো খাদ বা জংলী গাছগুলো দেখতে দেখতে প্রায় ঘন্টা তিন পরে পৌঁছলাম ঝাউবাড়ি বা
জৌবাড়ি , তুম্বলিং থেকে প্রায় ৬ কিমি । এক প্লেট ধোঁয়া ওঠা গরম মোমো শরীরের সব ক্লান্তি দূর করে দেয়, আর সঙ্গে যদি একটা বড়ো কাপ গরম লাল চা হয়, তো কথা-ই নেই। এখান থেকে গৈরিবাস মাত্র ১ কিমি , রাস্তার শেষটা ভীষণ ঢালু হয়ে নিচের দিকে চলে গেছে , দেখে মনে হয় একটা স্টিলের ভাত খাবার থালা পেলে , তার ওপর বসে ছোটবেলার স্লিপ চড়ার স্মৃতিটা ঝালিয়ে নেওয়া যেত। এদিকে আবহাওয়া বেশ খারাপ হচ্ছে, কুয়াশায় সব অপরিষ্কার হয়ে উঠছে। পাহাড়ে এই এক সমস্যা , কখন যে আবহাওয়া খারাপ হয় তার ঠিক নেই। যাই হোক আমাকে কালিপোখরি পৌঁছতে হবে আজ। আকাশ কালো ঝাপসা হয়ে উঠছে। এখান থেকে ২ কিমি কাইয়াকাট্টা বা কয়কাট্টা , কিন্তু রাস্তা বেশ চড়াই এবং কুয়াশার জন্য রাস্তা প্রায় দেখা যায়না। কাইয়াকাট্টা তে একটা কাঠের তৈরী টিনের চালা ঘর, বেশ সুন্দর একটা ছোটোখাটো দোকান। এক কাপ গরম চা সত্যি দরকার হয়ে পড়েছিলো। দোকানের নেপালি কম বয়সী মেয়েটি আমাকে বললো এখানেই আজ রাতটা থেকে যেতে, আরো বললো ,বৃষ্টি হবে তাই কালিপোখরি পৌঁছতে অন্ধকার হয়ে যাবে। ভাবলাম এখন থেকে মাত্র ৪ কিমি যেতে কত আর সময় লাগবে। মনে মনে ভাবলাম কুয়াশা তার ওপর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি , অন্ধকার হবার ভয়, সব মিলে একটা রোমাঞ্চকর পরিস্থিতি হতে চলেছে , এ সুযোগ হাতছাড়া করা চলেনা। একটু তাড়াতাড়ি পা চালালেই হবে।
নিজেই নিজেকে বলি অরে ভয়ের কিছু নেই , গাড়ি চলা রাস্তা, গাদা গাদা লোক এই রাস্তা দিয়ে বেড়াতে যায় , আমিও আগে গেছি কয়েক বার। নিজেকে অনুপ্রাণিত করার জন্য মনে করি Mark Inglis এর কথা , এই কদিন আগে লোকটা দুটো পা না থাকা সত্ত্বেও টপাটপ করে এভারেস্টের মাথায় উঠে পড়লো। রাস্তার দুধারে গাছগুলো বেশ ঝাপসা হয়েছে , পোকাগুলো যেন আরো জোরে ডাকছে। হওয়ার জোর বেড়েছে | অনেকক্ষণ ধরে হেঁটে চলেছি তাই শীত করছে না। এর পর হটাৎ মাথায় টুক টাক করে খুদি খুদি পাথর পড়ার মতো শীল পড়তে শুরু করলো , আর সঙ্গে সঙ্গেই বরফ গলা জলের বৃষ্টি। মনে পড়লো আমার সবে সবে কেনা সস্তা জুতোটা জল আটকাতে পারবে না। খুব তাড়াতাড়ি দুটো প্লাস্টিকের প্যাকেট দু পায়ে মোজার ওপর দিয়ে পরে নিয়ে জুতোর মধ্যে পা চালান করলাম। এটা একটা বাজে ভুল করেছিলাম , বুঝলাম একটু পর, যখন রাস্তার পাথরের ওপর আছাড় খেয়ে পড়লাম।ডান পায়ের হাঁটুতে বেশ জোরে লাগলো, কারণ পিঠের ৫০ লিটার ব্যাগের ওজন কম ছিলোনা। বৃষ্টির মধ্যে রাস্তাতেই বসে পড়ে রেনকোটের ওপর দিয়ে হাঁটুটা চেপে ধরে ব্যথা কমানোর চেষ্টা করতে করতে ভাবতে লাগলাম কেন পড়লাম। কারণটা খুব সহজ , কথায় বলে চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে , আগে বুঝলে পড়তাম না। একটু কম আলোতে তাড়াতাড়ি পা চালাতে গিয়ে এটা খেয়াল ছিলোনা যে বরফের কুঁচো গুলো মাড়িয়ে চলেছি , জুতোর ভেতরে জল আর এই জলের মধ্যে প্লাস্টিকে মোড়া পা , প্লাস্টিক , জলের মধ্যে স্লিপ করছে আর জুতোর নিচের খাঁজে খাঁজে বরফ ঢুকে জুতোর তলাটা মসৃন হয়েছে। কত ফুটবল প্লেয়ার তো ল্যাং খেয়ে পড়ে গেলেও আবার উঠে দৌড় লাগায় , আমিও পারবো। আবার হাঁটা শুরু করলাম , এবার হাঁটার গতি একটু কমেছে কারণ একটু খুঁড়িয়ে হাঁটতে হচ্ছে। দেখতে দেখতে অন্ধকার হয়ে এলো। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি কিছুতেই আর পিছু ছাড়েনা। কিছুক্ষনের মধ্যে কালিপোখরির ট্রেকার্স হাট এর টিম টিমে আলো গুলো চোখে পড়লো , রেনকোটের মধ্যে জামা, গেঞ্জি ঘামে ভিজে বেশ বাজে অবস্থা , এতো কিছু কষ্টের মধ্যেও ওই সামান্য আলো আমার মানসিক ব্যাটারীকে ফুল চার্জ করে দিলো। ট্রেকার্স হাটে কোনো রকমে পিঠের ব্যাগটা নামিয়ে রেখে ছুটলাম রান্না ঘরের দিকে। আগে যে করেই হোক জুতো শুকোতে হবে।
দেখি আমার সেই তিন সাহেব বন্ধু আগে থেকেই একটা আগুনের কড়াই ঘিরে গোল হয়ে বসে খোশমেজাজে ব্র্যান্ডি খাচ্ছেন, আর গল্প করছেন। দেখে খুব হিংসা হলো , কেউ ভেজেননি , সবার জুতোও শুকনো
🙁 .আমি জুতো দুটোকে আগুনের পাশে রেখে একটা ব্র্যান্ডি চেয়ে বসলাম ওনাদের সঙ্গে। টুকটাক গল্প করলেও মন আমার পড়ে আছে জুতোর দিকে , মাঝে মাঝেই ভুট্টা পোড়ানোর মত করে জুতো দুটোকে আগুনের ওপর ঝলসাচ্ছি আর বেশ ধোঁয়া বেরোচ্ছে। স্কুলে ভৌত বিজ্ঞান বই এ পড়েছিলাম ,পাহাড়ি জায়গায় হওয়ার চাপ কম বলে জল কম উত্তাপেও ফোটে , মনে হয় এই কারণেই জুতো থেকে এতো সহজে এতো ধোঁয়া বেরোচ্ছে। সে যাই হোক , যত ধোঁয়া হবে ,তত তাড়াতাড়ি জুতো শুকোবে। জুতো নিয়ে আগুনের সঙ্গে খেলা করতে করতে বুঝলাম আমার ভীষণ খিদে পেয়েছে, ভীম নাকি বক রাক্ষসের জন্য এক গাড়ি খাবার বয়ে নিয়ে গিয়ে , সব খাবার একাই খেয়ে ফেলেছিলেন। ব্যাপারটা খুবই স্বাভাবিক মনে হলো , আমার যদি পিঠে ব্যাগ নিয়ে হাঁটাহাঁটি করার ফলে এই ভীষণ খিদে পায় , ভীম বাবুতো অতবড় একটা গাড়ি ঠেলে নিয়ে গেছিলেন।একটা রাক্ষসের নাম কি করে বক বা বকো হয় তা জানিনা , বকের মতো উড়ে বেড়াতেন বা হয়তো খুব বকবক করতেন , tv সিরিয়ালের রাক্ষসেরা তো শুধু হা হা করে হাসেন দেখেছি। রাতের ডিনার গরম খিঁচুড়ি, সঙ্গে ডিম্ আর আলু ভাজা।
সকালে উঠে চারপাশ দেখে বেশ অবাক হলাম , এই কালিপোখরিতে তো কাল
আসিনি , চারপাশ বরফে সাদা হয়ে আছে। সকাল সাতটার মধ্যে ব্রেকফাস্ট করে বেরিয়ে পড়তে হবে , বেশ অনেকটা পথ বাকি।কালিপোখরি থেকে বিকেভঞ্জন মাত্র ২ কিমি, তারপর ভয়ঙ্কর চড়াই রাস্তার শুরু। বিকেভঞ্জন কথাটার মানে বিষাক্ত উপত্যকা , এখানে অনেক একোনাইট গাছ হয় তাই এই নাম। বিকেভঞ্জন পৌঁছে বুঝলাম ডানপায়ের হাঁটুতে ব্যথাটা বেশ বেড়েছে। দোকানে বসে প্যান্টটা গুটিয়ে হাঁটুর ওপর তুলতেই দেখি বেশ ফুলে গোল হয়েছে , একটা বাচ্চা ছেলে বলে উঠলো — টুট গিয়া কেয়া ? কথাটা শুনে বুকের ভেতরটা ধড়াস করে উঠলো। দোকানের ভেতরে উনুনের কাছে বসে চা খেতে খেতে বুঝলাম এই পা নিয়ে সান্দাকফু যাওয়া অসম্ভব। পায়ের ওপর ভর দিলেই বেশ ব্যথা করছে ।এখন একটাই সহজ উপায় , গাড়ি করে মানেভঞ্জন ফেরত যাওয়া। মন সায় দেয় না , এরকম ভাবে বাড়ি ফিরবো ? কিছুই বেড়ানো হলোনা ! একজন একটা বুদ্ধি দিলেন , এখান থেকে জঙ্গল দিয়ে রিম্বিক যাবার সহজ রাস্তা আছে , আমি সঙ্গে সঙ্গে রাজি। একটি সমবয়সী ছেলে আমার গাইড হতে রাজি হলো , যদিও সহজে রাজি হয়নি কারণ তার চিতা বাঘের ভয় , কিন্তু ৬০০ টাকা , বাঘের ভয়কেও তুচ্ছ করতে পারে।
বছরের এই সময়টায় আবহাওয়া খারাপ হওয়ার কথা নয় , তাও প্রকৃতি মুখ গোমড়া করে আছে। গুঁড়ি গুঁড়ি বরফ পড়ছে আর সঙ্গে ঘন কুয়াশা। আমার ব্যাগটা গাইড বন্ধু পিঠে তুলে নিয়ে হাঁটা লাগলো জঙ্গলের দিকে। শার্লক হোমস, সিঁড়িতে জুতোর মস্ মস্ আওয়াজ শুনে বলে দিতে পারতেন কে আসছে বা কেন আসছে। এই মস্ মস্ শব্দটা কেমন হয় সেটা আজ জানলাম , বরফের ওপর দিয়ে হাঁটার সময়। এক অদ্ভুত পরিস্থিতি , পায়ের তলায় মাটি বরফে সাদা , চোখের সামনে সাদা কুয়াশা , মনে হয় যেন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে আন্টার্টিকা অভিযানে চলেছি । জঙ্গলের শুরুতে বড়ো কোনো গাছ নেই , কিছু ঝোপ ঝাড় বরফে সাদা হয়ে আছে। গাইড বন্ধু বললো চিন্তার কোনো কারণ নেই , মাত্র ১৮ কিমি রাস্তা তাও পুরোটাই নিচের দিকে ঢালু , ৫ ঘন্টায় পৌঁছেযাবো। আমার পকেটে একটা খুব সস্তা হ্যান্ডি ক্যাম , কিন্তু এতো কুয়াশা যে ছবিও ঠিক মতো ওঠে না। চলতে চলতে বরফ আস্তে আস্তে কমতে থাকে আর জঙ্গলটা আসল রূপ দেখাতে শুরু করে । দেখে বোঝা যায় এখন দিয়ে মানুষের খুব একটা চলাচল নেই , কোনো পায়েচলা সরু রাস্তাও নেই।এই
জঙ্গলের নাম সিঙ্গালিলা। গাইড বন্ধু চিতা বাঘের নানা গল্প শোনায় , কখন কার ঘাড়ে লাফিয়ে পড়েছিল ইত্যাদি। আমার মনে চিন্তা হয় , পা ঠিক থাকলে দৌড়েও বাঁচার চেষ্টা করতে পারতাম। অবশ্য চিতা অনেক জোর দৌড়োতে পারে তাই দুঃখের কিছু নেই। যদি চিতা আমার ঘাড়ে এসে পড়ে , আমার মৃত্যুর পর এই ঘটনা নিয়ে যদি কোনো যাত্রাপালা হয় , তাহলে নিশ্চই তার নাম হবে , খোঁড়ার ঘাড়ে চিতা ।হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি হাঁটুর ব্যথাটা বেশ বেড়ে উঠছে। নতুন চিন্তা এলো মাথায় , সত্যি পৌঁছতে পারবো তো ? গাইড বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করলাম যদি পৌঁছতে না পারি ,কাছাকাছি কোনো থাকার জায়গা আছে ? উত্তর এলো , থাকার কোনো প্রশ্নই নেই এবং থাকার কোনো জায়গাও নেই। এবার আমার কপালে ঘাম জমলো। জঙ্গলটা সত্যিই বেশ গভীর , মাঝে মধ্যে ছোটোখাটো ঘাসের ফাঁকা জায়গা। এই ঘাসের ওপর বসে বিশ্রাম নেওয়া যায় , ঘন্টা তিন হাঁটার পর এরকম এক ঘাসের ওপর বসা অবস্থা থেকে উঠতে গিয়ে দেখি , পা আর নাডাতে পারছিনা। আমার গাইড বন্ধু সেই ব্যাপারটা বুঝেই তার ব্যাগ থেকে একটা এক হাত লম্বা ছুরি বার করলো। না আমার পা কেটে বাদ দেবার জন্য নয়।
একটু পর জঙ্গল থেকে একটা Y এর মতো দেখতে শক্তপোক্ত গাছের ডাল নিয়ে এসে বন্ধু বললো , এখন এটা দিয়েই কাজ চালাও । হাঁটুর ক্রেপ ব্যান্ডেজটা ঠিক করে বেঁধেনিয়ে Y ডালকে ক্র্যাচারের মতো করে বগলে গুঁজে হাঁটার চেষ্টা করতেই বুঝলাম , ব্যাপারটা মোটেও সহজ নয়। কাকাবাবু সন্তুকে নিয়ে ক্র্যাচ বগলে করে সবুজ দ্বীপে কি করে অতবড় একটা এডভেঞ্চার করে এলেন কে জানে। দশ পা হাটতেই ঘাম ছুটেযাচ্ছে, তার ওপর ডান পায়ের নিচের দিকটা দোলা খেয়ে অসম্ভব ব্যথা করছে। বুঝলাম পায়ের নিচের দিকটা দোলানো চলবেনা। গাইড বন্ধুকে বললাম , জুতোর ফিতেটা খুলে ফেলে পায়ের গোড়ালির কাছটা লাঠিটার সঙ্গে বেঁধে দিতে। জঙ্গলটা যত নিচের দিকে যাচ্ছে , গাছগুলোর উচ্চতা তত বাড়ছে, মাঝে মাঝে কুয়াশা এসে বেশ একটা ভুতুড়ে পরিবেশ তৈরী করছে। লম্বা লম্বা গাছের গায়ে পুরোন শ্যাওলা আর মাটিতে অজস্র শুকনো পাতা ,হেঁটে গেলেই খচ্মচ্ করে আওয়াজ হয়, আর কি যেন পোকা যেগুলো তারস্বরে চিৎকার করে যাচ্ছে , কিরররর্ কিরররর্।
হটাৎ বন্ধু ইশারা করে থামতে বললো, আর একদিকে আঙ্গুল তুলে দেখালো। দেখি একটা গাছের ডালে একটা কমলা রঙের বেড়ালের মতো সুন্দর দেখতে প্রাণী গোল গোল চোখ করে অবাক হয়ে আমাদের দিকে দেখছে। কয়েক মুহূর্তেই সে ভয় পেয়ে পালিয়ে গেলো। ইস্ এই রেড পান্ডাটার ছবিটাও তুলতে পারলাম না। বেশ অনেকক্ষন আগে দুপুরের খাওয়া সেরেছি কলা, ডিম্ সিদ্ধ , বন্ধুর আনা ঠান্ডা ভাত আর স্কোয়াশের তরকারি দিয়ে। কাঁধ আর কোমর ব্যথায় অবশ হয়ে আসছে , নাঃ আর সম্ভব নয়। একটা পাথরের ওপর বসে পড়লাম , বন্ধু আমাকে বসতে বারণ করেছিল । দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই বিশ্রাম নিচ্ছিলাম এতক্ষন , কিন্তু আর সম্ভব নয়।আমি বললাম আমি আর যেতে পারবনা , বন্ধু চুপ চাপ আমার পাশে বসে পড়লো ,যেন কিছুই হয়নি। গাছের ফাঁক দিয়ে সূর্যাস্তের লালচে আলো , অন্ধকার জঙ্গলটায় একটু হলেও আলো দিচ্ছে। আমার খুব ঘুম পাচ্ছে , এরকম কখনো হয়নি, নিজেই নিজের অবস্থায় অবাক হচ্ছি। বন্ধু বললো চলো ওঠো ৫ কিমি রাস্তা বাকি। আমি বললাম , না আমি কিছুতেই যাবনা। ও আমাকে নানা ভাবে বোঝানোর বা কখনো ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে দেখে , হটাৎ বিরক্তি বা রাগে বললাম, তুমি চলে যাও , দুনিয়ার সব বাঘ ভাল্লুক এলেও আমি নড়ব না। গাইড বন্ধু অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলে “তুমি আমার ওপর রাগ করছো কেন , আমি তো চাইলেই চলে যেতে পারি”। “তোমার ক্ষমতা নেই, সাহস নেই , জঙ্গলে এলে কেন ? গাড়ি চেপে ফিরে যেতে পারতে “। এই কথাটায় জ্বালা ধরালো , ছেলেটা আমাকে ভীতু ভাবে নাকি ? আর সত্যিই আমার রাগ করার কোনো কারণ নেই , মনে হয় ব্যথা আর ক্লান্তির জন্য মাথা কাজ করেনি। হাতটা বাড়িয়ে দিলাম বন্ধুর দিকে। একা মাটি থেকে ওঠা সম্ভব ছিলনা আমার পক্ষে। এর পর আমি কিছু জানিনা ,কোনো প্রাকৃতিক শোভা আর আমার চোখে পড়েনি , শুধু মাথায় একটাই চিন্তা যত কষ্টই হোক আমাকে পৌঁছতে হবে , যত রাস্তাই হোক , আমায় চলতে হবে । কতটা চলেছি জানিনা , সামনে বন্ধুকে দেখে শরীরের শেষ শক্তিটা দিয়ে চলেছি , ঘামে মাথার চুলও ভিজে জবজব করছে ,মুখ দিয়ে নিজের অজান্তে ঠেলা গাড়ির চালকের মতো হ্যেই হ্যেই করে আওয়াজ বেরোচ্ছে, এমন সময় একটা চওড়া জায়গায় দেখি মাটির ওপর গাড়ির চাকার দাগ। আমার মনে হলো জীবনে এর থেকে সুন্দর দৃশ্য কোনোদিন দেখিনি , তার মানে আর একটু , এর পর আমি ঘুমোতে পারবো। সামান্য গাড়ির চাকার দাগ, আমাকে নতুন শক্তি দিলো। আমি সময় বা দূরত্বের কিছু হিসাব করতে পারিনি , বন্ধুর সঙ্গে কথাও বন্ধ , কথা বলতে গেলেও শক্তি লাগে। দেখলাম একটা সিমেন্টের সিঁড়ি দিয়ে চলেছি। একটু দূরে অন্ধকারের মধ্যে কয়েকটা কাঠের বাড়ি। বন্ধু বললো আর ২ কিমি দূরে রিম্বিক। আমি প্রথম কাঠের বাড়িটার সামনে বসে বললাম ,আর আমাকে যেতে বলোনা, আমি এখানেই থাকবো। এই বাড়ি থেকে এক বৃদ্ধ মানুষ বেরিয়ে এসে আমার অবস্থা দেখে ভেতরে নিয়েগিয়ে বসালেন এবং বন্ধুর সঙ্গে কিছু কথা বললেন , কি কথা আমি জানি না। বন্ধু আমাকে বললো “আরামসে বাইঠিয়ে , কোই দিক্কত নেহি “।ও চলে যাবার সময় আমি ওর হাত চেপে ধরলাম বিদায় জানবার জন্য , আমার চোখে জল দেখে বেশ হেসে বন্ধু বললো , “ফির মিলেঙ্গে ” ।
বৃদ্ধ মানুষটি আমার জন্য এক বাটি গরম নুডুলস আর দুটো ডিম্ সিদ্ধ বানালেন , বিনা বাক্যব্যায়ে সেগুলো শেষ করে কোনো রকমে বিছানায় ঝাঁপ । পরদিন ঘুম ভাঙলো বেশ ভোরে, পায়ের ব্যথাটা একটু কম। বাইরে বেরিয়ে দেখি ঘন মেঘের ফাঁক দিয়ে প্রথম সূর্যের আলো উঁকি দিচ্ছে । বেশ কিছু ভিডিও ছবি তুললাম , গরম গরম মোমো দিয়ে ব্রেকফাস্ট হলো।এবার রিম্বিকের দিকে পা বাড়ানোর পালা। বৃদ্ধ মানুষটিকে টাকা দিতে গিয়ে বুঝলাম , টাকা নিতে উনি নারাজ , মনে মনে ভাবি , এখানকার মানুষ এতো ভালো হয় কি করে।একরকম জোর করেই একটা ৫০০ টাকার নোটের সঙ্গে একটা ১০০ টাকা মুড়ে ওনার পকেটে ঢুকিয়ে দিয়ে রওনা হলাম খোঁড়াতে খোঁড়াতে। আজ রিম্বিকে বিশ্রাম নিতে হবে, ব্যাথাটা কমানো দরকার। কাল নাহয় শ্রীখোলা যাবো। শ্রীখোলা তে বেশ কিছু ভিডিও তুলেছি , ওখানকার অপরূপ সৌন্দর্য আমার ক্যামেরা বন্দি তাই লেখার প্রয়োজনটাও ফুরোলো.
সকালবেলাটা পাহাড়ি অঞ্চলে আবহাওয়া বেশ সুন্দর থাকে , চারদিক বেশ পরিষ্কার দেখা যায়। মরা ঘাসের মাথায় গুঁড়ো গুঁড়ো সামান্য বরফ এখনো একটু আধটু রয়ে গেছে। একটু হাঁটাহাঁটি করে আড়মোড়া ভাঙার সময় মনে হলো ,একটা কাউবয় মার্কা ড্রেস, একটা দোনলা বন্দুক (গুলি না থাকলেও চলবে ) আর একটা ঘোড়া পেলে বেশ হতো ।The Good, the Bad and the Ugly সিনেমার Clint Eastwood এর সঙ্গে নিজের একটা মিল তৈরী করলাম।কিন্তু ওই কঠিন মুখওয়ালা চুরুট চিবোনো দস্যু এখানে পাওয়া যাবেনা।বেশি সময় নষ্ট না করে বেরিয়ে পড়লাম সান্দাকফুর দিকে। টংলু থেকে তুম্বলিং একটুখানি রাস্তা প্রায় ১.৫ কিমি হবে। বেশ তাড়াতাড়ি পৌঁছে গেলাম নীলাদির হোটেলে। চা বিস্কুট আর একটু




দেখি আমার সেই তিন সাহেব বন্ধু আগে থেকেই একটা আগুনের কড়াই ঘিরে গোল হয়ে বসে খোশমেজাজে ব্র্যান্ডি খাচ্ছেন, আর গল্প করছেন। দেখে খুব হিংসা হলো , কেউ ভেজেননি , সবার জুতোও শুকনো

সকালে উঠে চারপাশ দেখে বেশ অবাক হলাম , এই কালিপোখরিতে তো কাল

বছরের এই সময়টায় আবহাওয়া খারাপ হওয়ার কথা নয় , তাও প্রকৃতি মুখ গোমড়া করে আছে। গুঁড়ি গুঁড়ি বরফ পড়ছে আর সঙ্গে ঘন কুয়াশা। আমার ব্যাগটা গাইড বন্ধু পিঠে তুলে নিয়ে হাঁটা লাগলো জঙ্গলের দিকে। শার্লক হোমস, সিঁড়িতে জুতোর মস্ মস্ আওয়াজ শুনে বলে দিতে পারতেন কে আসছে বা কেন আসছে। এই মস্ মস্ শব্দটা কেমন হয় সেটা আজ জানলাম , বরফের ওপর দিয়ে হাঁটার সময়। এক অদ্ভুত পরিস্থিতি , পায়ের তলায় মাটি বরফে সাদা , চোখের সামনে সাদা কুয়াশা , মনে হয় যেন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে আন্টার্টিকা অভিযানে চলেছি । জঙ্গলের শুরুতে বড়ো কোনো গাছ নেই , কিছু ঝোপ ঝাড় বরফে সাদা হয়ে আছে। গাইড বন্ধু বললো চিন্তার কোনো কারণ নেই , মাত্র ১৮ কিমি রাস্তা তাও পুরোটাই নিচের দিকে ঢালু , ৫ ঘন্টায় পৌঁছেযাবো। আমার পকেটে একটা খুব সস্তা হ্যান্ডি ক্যাম , কিন্তু এতো কুয়াশা যে ছবিও ঠিক মতো ওঠে না। চলতে চলতে বরফ আস্তে আস্তে কমতে থাকে আর জঙ্গলটা আসল রূপ দেখাতে শুরু করে । দেখে বোঝা যায় এখন দিয়ে মানুষের খুব একটা চলাচল নেই , কোনো পায়েচলা সরু রাস্তাও নেই।এই


হটাৎ বন্ধু ইশারা করে থামতে বললো, আর একদিকে আঙ্গুল তুলে দেখালো। দেখি একটা গাছের ডালে একটা কমলা রঙের বেড়ালের মতো সুন্দর দেখতে প্রাণী গোল গোল চোখ করে অবাক হয়ে আমাদের দিকে দেখছে। কয়েক মুহূর্তেই সে ভয় পেয়ে পালিয়ে গেলো। ইস্ এই রেড পান্ডাটার ছবিটাও তুলতে পারলাম না। বেশ অনেকক্ষন আগে দুপুরের খাওয়া সেরেছি কলা, ডিম্ সিদ্ধ , বন্ধুর আনা ঠান্ডা ভাত আর স্কোয়াশের তরকারি দিয়ে। কাঁধ আর কোমর ব্যথায় অবশ হয়ে আসছে , নাঃ আর সম্ভব নয়। একটা পাথরের ওপর বসে পড়লাম , বন্ধু আমাকে বসতে বারণ করেছিল । দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই বিশ্রাম নিচ্ছিলাম এতক্ষন , কিন্তু আর সম্ভব নয়।আমি বললাম আমি আর যেতে পারবনা , বন্ধু চুপ চাপ আমার পাশে বসে পড়লো ,যেন কিছুই হয়নি। গাছের ফাঁক দিয়ে সূর্যাস্তের লালচে আলো , অন্ধকার জঙ্গলটায় একটু হলেও আলো দিচ্ছে। আমার খুব ঘুম পাচ্ছে , এরকম কখনো হয়নি, নিজেই নিজের অবস্থায় অবাক হচ্ছি। বন্ধু বললো চলো ওঠো ৫ কিমি রাস্তা বাকি। আমি বললাম , না আমি কিছুতেই যাবনা। ও আমাকে নানা ভাবে বোঝানোর বা কখনো ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে দেখে , হটাৎ বিরক্তি বা রাগে বললাম, তুমি চলে যাও , দুনিয়ার সব বাঘ ভাল্লুক এলেও আমি নড়ব না। গাইড বন্ধু অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলে “তুমি আমার ওপর রাগ করছো কেন , আমি তো চাইলেই চলে যেতে পারি”। “তোমার ক্ষমতা নেই, সাহস নেই , জঙ্গলে এলে কেন ? গাড়ি চেপে ফিরে যেতে পারতে “। এই কথাটায় জ্বালা ধরালো , ছেলেটা আমাকে ভীতু ভাবে নাকি ? আর সত্যিই আমার রাগ করার কোনো কারণ নেই , মনে হয় ব্যথা আর ক্লান্তির জন্য মাথা কাজ করেনি। হাতটা বাড়িয়ে দিলাম বন্ধুর দিকে। একা মাটি থেকে ওঠা সম্ভব ছিলনা আমার পক্ষে। এর পর আমি কিছু জানিনা ,কোনো প্রাকৃতিক শোভা আর আমার চোখে পড়েনি , শুধু মাথায় একটাই চিন্তা যত কষ্টই হোক আমাকে পৌঁছতে হবে , যত রাস্তাই হোক , আমায় চলতে হবে । কতটা চলেছি জানিনা , সামনে বন্ধুকে দেখে শরীরের শেষ শক্তিটা দিয়ে চলেছি , ঘামে মাথার চুলও ভিজে জবজব করছে ,মুখ দিয়ে নিজের অজান্তে ঠেলা গাড়ির চালকের মতো হ্যেই হ্যেই করে আওয়াজ বেরোচ্ছে, এমন সময় একটা চওড়া জায়গায় দেখি মাটির ওপর গাড়ির চাকার দাগ। আমার মনে হলো জীবনে এর থেকে সুন্দর দৃশ্য কোনোদিন দেখিনি , তার মানে আর একটু , এর পর আমি ঘুমোতে পারবো। সামান্য গাড়ির চাকার দাগ, আমাকে নতুন শক্তি দিলো। আমি সময় বা দূরত্বের কিছু হিসাব করতে পারিনি , বন্ধুর সঙ্গে কথাও বন্ধ , কথা বলতে গেলেও শক্তি লাগে। দেখলাম একটা সিমেন্টের সিঁড়ি দিয়ে চলেছি। একটু দূরে অন্ধকারের মধ্যে কয়েকটা কাঠের বাড়ি। বন্ধু বললো আর ২ কিমি দূরে রিম্বিক। আমি প্রথম কাঠের বাড়িটার সামনে বসে বললাম ,আর আমাকে যেতে বলোনা, আমি এখানেই থাকবো। এই বাড়ি থেকে এক বৃদ্ধ মানুষ বেরিয়ে এসে আমার অবস্থা দেখে ভেতরে নিয়েগিয়ে বসালেন এবং বন্ধুর সঙ্গে কিছু কথা বললেন , কি কথা আমি জানি না। বন্ধু আমাকে বললো “আরামসে বাইঠিয়ে , কোই দিক্কত নেহি “।ও চলে যাবার সময় আমি ওর হাত চেপে ধরলাম বিদায় জানবার জন্য , আমার চোখে জল দেখে বেশ হেসে বন্ধু বললো , “ফির মিলেঙ্গে ” ।
বৃদ্ধ মানুষটি আমার জন্য এক বাটি গরম নুডুলস আর দুটো ডিম্ সিদ্ধ বানালেন , বিনা বাক্যব্যায়ে সেগুলো শেষ করে কোনো রকমে বিছানায় ঝাঁপ । পরদিন ঘুম ভাঙলো বেশ ভোরে, পায়ের ব্যথাটা একটু কম। বাইরে বেরিয়ে দেখি ঘন মেঘের ফাঁক দিয়ে প্রথম সূর্যের আলো উঁকি দিচ্ছে । বেশ কিছু ভিডিও ছবি তুললাম , গরম গরম মোমো দিয়ে ব্রেকফাস্ট হলো।এবার রিম্বিকের দিকে পা বাড়ানোর পালা। বৃদ্ধ মানুষটিকে টাকা দিতে গিয়ে বুঝলাম , টাকা নিতে উনি নারাজ , মনে মনে ভাবি , এখানকার মানুষ এতো ভালো হয় কি করে।একরকম জোর করেই একটা ৫০০ টাকার নোটের সঙ্গে একটা ১০০ টাকা মুড়ে ওনার পকেটে ঢুকিয়ে দিয়ে রওনা হলাম খোঁড়াতে খোঁড়াতে। আজ রিম্বিকে বিশ্রাম নিতে হবে, ব্যাথাটা কমানো দরকার। কাল নাহয় শ্রীখোলা যাবো। শ্রীখোলা তে বেশ কিছু ভিডিও তুলেছি , ওখানকার অপরূপ সৌন্দর্য আমার ক্যামেরা বন্দি তাই লেখার প্রয়োজনটাও ফুরোলো.