শেষ দেখা

সবাই বলে 13 তারিখ তা নাকি অশুভ , কিন্তু আমার জীবনে এই 13তারিখ তা খুুুব মধুর। 2017 সালের 13ই আগস্ট হঠাৎ একটা মিষ্টি দেখতে মেয়ের বন্ধুুত্বর প্রস্তাবনা  ফেসবুক পাতায়।কে ঠিক চিনতে পারছিলাম না । পরে জানলাম ভালো নাম দেবশ্রী। আমি এমন এক পরিবার থেকে মানুষ হয়েছি কিনা ভীষণ সংরক্ষিত সবার সাথে মিশতে ভয় হতো বিশেষ করে মেয়েদের সাথে। তাই আমার বন্ধু মহলে প্রায় সবার কাছে হাসস্পদ হতে হতে হয়েছিল। তাই আমার বন্ধু বলতে গান , আকা, বইপড়া এদের নিয়েই চলে গেছে এতগুলো বছর। তাই ফেসবুক  থেকে এই মেয়েটি যখন জানলো যে সেও গান নিয়েই চলছে আর স্কুল টিচার আমার সাথে বন্ধুত্ব করতে চায়, কেনো জানি না ফেরাতে পারিনি। দেখতে দেখতে আজ আমাদের বন্ধুত্বের ২বছর হয়ে গেল। আসলে  বন্ধুত্বের পাঁচ মাস পরেই আমার মাতৃবিয়োগ হয়, সেই সময় দেবশ্রী তার স্নেহ ভালোবাসা দিয়ে আমাই সেই ভীষণ শোক ভোলানোর চেষ্টা করেছিল। এক শীতের সকালে আমায় প্রথম জানায় যে সে আমাকে ভালোবাসে, কি যে বলবো ভাষা হারিয়ে ফেলেছিলাম ,সানন্দে সম্মতি দিয়েছিলাম। এমন দিন গেছে যে স্কুল করে বাড়ি থেকে লুকিয়ে আমার বাড়ি এসে মাঝে মধ্যে নানা পদ রান্না করে খাইয়েও দিয়েছে।

কিন্তু হঠাৎ কি যে হতে গেলো। হঠাৎ ওর বাড়ির থেকে বিয়ের তোড়জোড় শুরু করে দিলো। তাদের পছন্দ সেন্ট্রাল গভঃ চাকরি করা ছেলে বা বিদেশে কাজ করা ছেলে, দেবী আমার কথা বলার পর ভীষণ অশান্তি হোয় ওর বাড়িতে ওর স্কুল করা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর মধ্যে আমারও শরীর ভীষণ খারাপ  হয়ে পরে। ডাক্তাদাক্তার; তিনি সব চেক করে বলেন হার্ট এর অবস্থা ভালো নয়। দেবীর বাড়িতে এই নিয়ে নানা অশান্তি চরমে ওঠে শেষ পর্যন্ত আমার শারীরিক ক্রমাবনতির কথা ভেবে ওকে আমার কাছ থেকে মিথ্যে আছিলাই সরিয়ে দিতে বাধ্য হই;  সেদিন ওর জল ভর্তি চোখের দিকে তাকিয়ে অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে রেখেছিলাম। আজ ৫ মাস পর সরস্বতী পূজার দিন খুব ইচ্ছে করতে ওকে একটু দেখে আসতে । যে দীর্ঘ যাত্রা পথে রওনা হয়েছি তার আগে এক পলকের একটু দেখার আশা।

এমনিতেই শীতের বেলা তোমার জন্যে স্কুল তার বাইরে কতক্ষন ধরে  অপেক্ষা করছি। কখন আসবে কখন আসবে সময় ও যে আর বেশি নেই শীতের বেলা পর্যন্ত বিকেল ৪টে যে বাজে । উফঃ এতক্ষনে প্রতীক্ষার অবসান আরে ওইত হলুদ রঙের শাড়ি লাল টিপ আর টিপের নীচে অষ্ট গন্ধ চন্দনের একফালি হলুদ রেখা আধো অবিন্যস্ত চুল মাঝে মধ্যে এসে পড়বে তোমার চোখে তুমি তোমার চিকন আঙ্গুল সঞ্চালনে আবার সরিয়ে দেবে, গাছের ফাক থেকে শীতের দুপুরের এক মুঠো রোদ তোমার মুখের উপর পড়ে যেন লাজে সরে যাবে। দেবী ও দেবী ও দিকে  কোথায় যাচ্ছ ও কি!  ও তো কিছুই শুনতে পাচ্ছে না হায় আমি বোধয় নিস্পলক ভাবে দেখেই যাবো । তাকিয়ে থাকতে থাকতে হয়তো মনে হবে তোমায় ডাকি, আমার বাহুর বন্ধনে আবদ্ধ করে তোমায় আমার বুকের ঠিক মাঝখানে থাকা হৃদয়ের আওয়াজ তা শোনাই । কিন্তু কি যে  করি যত বার তোমায় ডাকি হওয়া যেন সে ডাক দূরে মিলিয়ে নিয়ে চলে যায়। অবশেষে তোমায় আবার হারিয়ে ফেলার ভয়ে কেপে উঠছিলাম , যদি ও জানতে পেরেছি তোমার বিয়ে সেই ONGC তে  কর্মরত পাত্র র সাথে ঠিক তবু একবার দেখার আশায় দমদম স্টেশন এর গেটের  সামনে দাঁড়ালাম । তুমি ও ততক্ষনে পৌঁছে গেছো ফোন নিয়ে কার সাথে যেন কথা বলতে বলতে, আমায় যেন দেখতেই পেলে না।

হঠাৎ যেন ঘোর তা ভাঙলো চারিদিকে কান্নার রোল। কে যেন বলছে ঠিক করে রাখুন নাহলে ঢোকানোর সময় আটকে যেতে পারে। এবার সব সরে পিছনে চলে যান। নীরব অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বলো হরি হরি বল , উফফ কি গরম তাড়াতাড়ি দরজাটা বন্ধ করুন না। আরে দরজাটা বন্ধ হবার আগে একফাঁকে ছেলেটা কে খুব চেনা মনে হলো যেন। আরে লোক জনদের ও যেন চেনা লাগলো ওই তো মামা , মাসি , সবাই সব্বাই এসেছে । তাহলে একটা প্রজন্মের ঠাঁই আজ থেকে ইতিহাসের পাতায়। আবার দূরে দেখছি তুমি বসে আছি ৩ নং প্লাটফর্ম এর বেঞ্চিতে। পড়ন্ত সূর্যের আলো কি অপূর্বই না লাগছে যেন গলানো সোনা, তাই তো আমার বিদায় বেলার দেবী। ওহ মনে হতে পারে কি এমন হলো আসলে বুঝতেই পারিনি যে কাল কখন শরীরে বাসা  করে হার্ট তা শেষ করে দিয়েছে , একটা মাসিভ এট্যাক আর সব শেষ কোনো চান্স এ কাউকে দিইনি যাতে এই দেহটাকে টেনে হইচই করে টেনশন করতে হয় আসলে সবার এ তো বয়েস হয়েছে। কতই বা বয়েস এই ৩৮ কিন্তু বলতেই বলে কালের থাবা এক ঝটকাই সব শেষ। তবে দেবী এটা অস্বীকার করতে পারবো না শেষ চোখের একফোঁটা জল তোমায় ঘিরেই, এই তোমার ট্রেন এসে পড়ল ,তুমি হয়তো জানতেও পারলে না। যাক যা হল ভালোই হলো। ফাঁকা ট্রেন তুমি ডানদিকের জানালায় বসেছি আমি ও বাইরে থেকে দেখছি নিথর নীরব চোখের ভাষায় । এসবের মধ্যেই কখন যে 55 মিনিট হয়ে গেল নিচ থেকে ডাক এসে পড়ুন। সবাই জল দিলো অঙ্গার গুলো ছ্যাক ছ্যাক করে একটু চুপ করল শেষ পাড়ানির বন্ধু নাভি তা কার মাটির মধ্যে দিয়ে দিল খেয়াল করিনি। কারণ ওই যে শেষ বারের মতো তোমায় দেখবো , ট্রেন ও বালি ব্রীজ উঠছে ভবতারিণীর সন্ধ্যারতি শুরু হলো । তুমিও পরম ভক্তি যে প্রণাম করলে। ট্রেন যখন মাঝের ব্রিজে কে যেন আমায় টেনে নিয়ে গেল বাবু ঘাটের সেই শেষ ধাপ তাই । বিসর্জিত হলো শেষ চিহ্ন। জগতের সাথে সব সম্পর্ক শেষ। খুব ইচ্ছা ছিল আরেকবার দেখি কে যেন বললো এবারের মতো সব শেষ এবার চলো। তবে দেবী তোমার কাছে আমার ওই শেষ চোখের জলে ছিল আমার দেবী পূজার শেষ তর্পণ।

Kaushik Bhattacharyya

Kaushik Bhattacharyya

আমি কৌশিক ভট্টাচার্য কলকাতাই থাকি, এই প্রথম উইসস্ক্রিপট এর পাঠক কুলের কাছে আমার লেখা উপস্থাপন করছি। তাই লেখার পূর্বে আত্ম পরিচয় একটু না দিলেই নয়। আমি কারুর অনুকরণীয় নই সংসার করিনি , সঙ্গীত, লেখা, আকা আর আধ্যাত্মিক জগৎ নিয়েই থাকতে ভালোবাসি আর প্রকৃতির টানে মাঝে মধ্যেই বেরিয়ে পড়ি।

More Posts

Related posts

One Thought to “শেষ দেখা”

  1. Avatar বিবেকানন্দ বিশ্বাস

    কৌশিক বাবুর শেষ দেখা ভালোই ! কয়েকটি বানান ভুল রয়েছে । বিষয় বিন্যাস আরেকটু প্রাঞ্জলভাবে করলে, বুঝতে সুবিধা হবে মনে হয় ।

Leave a Comment