বান্দ্রা স্টেশনের এক কোনায় বসে রাজু লোকাল ট্রেনগুলোর আসা যাওয়া দেখছিল । আর বারবার তাকাচ্ছিল দিদিমণি কখন আসবে । প্রতিদিন অফিস শেষে দিদিমণি ফিরে যায় । প্রায়ই একটি খাবারের প্যাকেট হাতে দেয় , তাতে ওর রাতের খাওয়া হয়ে যায় ।
টুম্পার সঙ্গে ওর দেখা হওয়া যেন এক দৈবযোগ । একদিন প্ল্যাটফর্মের ভিড়ে একটি চোর ওর হাতের ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে পালাচ্ছিল । ও ছুটে গিয়ে ওর কাছ থেকে তা কেড়ে নিয়ে এসে টুম্পাকে ফিরিয়ে দেয় । সেই থেকে এই গরিব ছেলেটির প্রতি ওর মায়া পড়ে গেছে । প্ল্যাটফর্মেই ওর জীবন । বয়স ১২ বা ১৩ । সুদূর গ্রাম থেকে বিমাতার অত্যাচারে পালিয়ে এসেছে । সেও আজ বছর দুয়েক আগে । অনেক কষ্টে কাটে সময় , অনেকদিন খাওয়াও জোটে না । টুক টাক কাজ করে । বড়াপাবওয়ালার সেদ্ধ আলুর খোসা ছাড়িয়ে দেয় , কখনো দোকানদারদের মোট বয়ে আনে , যাত্রীদের মাল মাথায় করে তুলে দেয় । কেউ কিছু খেতে দেয় , কেউ দেয় কিছু পয়সা । এই ভাবেই চলছে ।
টুম্পা ওকে একটি অনাথ আশ্রমে রাখার ব্যবস্থা করেছিল , কিন্তু ও যেতে রাজি হয় নি । সকালে অনেকদিন ওর জন্য বাড়ি থেকে প্যাকেটে খাবার বানিয়ে আনে , আবার কোনদিন অফিস ফেরতাও ওর জন্য কিছু নিয়ে আসে ।বড় কষ্ট হয় ওর জন্য । এতটুকু ছেলে । সর্বদা ধাক্কা খেয়ে ফিরছে । মাঝে মাঝে ওর সঙ্গে বসে নানা কথা হয় । রাজু তখন খুব খুশি হয় । কারণ কেউ ওর সঙ্গে ভালভাবে কথাই বলেনা । সবাই শুধু ধমকাচ্ছে বা ফরমাশ করছে । একবার টুম্পা ওকে জামা প্যান্ট কিনে দিল । সেগুলো পেয়ে ও আনন্দে নাচতে লাগল । ওর খুশি দেখে টুম্পাও হাসতে লাগল । অনেকদিন রাজু বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে ওর জন্য অপেক্ষা করে । তারপর ও এলে ওকে সঙ্গে করে গিয়ে লেডিজ কম্পার্টমেন্টে তুলে দিয়ে হাত নাড়ে ।
একদিন টুম্পা একটু আগেই অফিস থেকে বেরিয়ে বাড়ি ফিরছিল । স্টেশনে রাজুকে দেখল না । ওর জন্য আনা খাবারের প্যাকেট নিয়ে ও খুঁজতে লাগল । শেষে একপ্রান্তে একটি ঝুপরির কাছে কিছু রদ্দি কুড়োনোর ছেলেদের সঙ্গে রাজুকে দেখতে পেল । ওরা ড্রাগ সিগারেটে পুরে টানছিল । টুম্পা ওর কান ধরে টেনে এনে জোরে ওর গালে একটি থাপ্পড় লাগাল । খাবারের প্যাকেট ওর গায়ে ছুড়ে দিয়ে বলল , “ এই করছিস তুই ? ছিঃ ! ” রাজু ওর পেছনে ছুটতে ছুটতে বলতে লাগল , “ দিদিমণি , ওরা জোড় করে আমাকে নিয়ে গিয়েছিল। বিশ্বাস কর আমি ওসব খাই নি – – – । ” টুম্পা ওর কোনো কথা না শুনে চলে গেল ।পরদিন থেকে টুম্পা ওকে আর স্টেশনে দেখতে পেল না । অনেককে জিজ্ঞেস করল , ওর জন্য অনেক সময় অপেক্ষা করল , কিন্তু ও কোথাও নেই । কোথায় গেল ছেলেটি ? ওকে মারার কথা ভেবে খুব খারাপ লাগছিল । ও হয়ত সত্যি কথাই বলছিল যে ও নেশা করে নি ।
এরপর তিন মাস কেটে গেছে ।
একদিন টুম্পা একটি কাজ শেষ করে বরিভিলি স্টেশন হয়ে ফিরছিল । লক্ষ্য করল কিছু লোক ভিড় করে কী একটা দেখছে । উকি দিয়ে ও অবাক্ । অসুস্থ রাজু থরথর করে কাঁপছে । গায়ে একটি ছেড়া চাঁদর মুরি দিয়ে পড়ে আছে ।
হাসপাতালে পাঁচদিন থাকার পর রাজু সুস্থ হয়ে উঠল । বিকেলে টুম্পা এলে রাজু বলল , “ দিদিমণি , তুমি বিশ্বাস কর , আমি সেদিন নেশা করি নি । ”
টুম্পা বলল , “ আমি জানি । তবে তুই আর ঐ প্ল্যাটফর্মে ফিরে যাবি না । আমি ব্যবস্থা করেছি । কাল আমি তোকে সেখানে নিয়ে যাব । ওরা তোকে পড়াবে , হাতের কাজ শেখাবে । তারপর তুই একদিন নিজের কাজ শুরু করবি । আমি আর কোনো না শুনতে চাই না । ”
টুম্পা ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই , দুচোখের ছলছল করা জলে রাজুর দৃষ্টি অস্পষ্ট হল ।
এরপর তিন মাস কেটে গেছে ।
একদিন টুম্পা একটি কাজ শেষ করে বরিভিলি স্টেশন হয়ে ফিরছিল । লক্ষ্য করল কিছু লোক ভিড় করে কী একটা দেখছে । উকি দিয়ে ও অবাক্ । অসুস্থ রাজু থরথর করে কাঁপছে । গায়ে একটি ছেড়া চাঁদর মুরি দিয়ে পড়ে আছে ।
হাসপাতালে পাঁচদিন থাকার পর রাজু সুস্থ হয়ে উঠল । বিকেলে টুম্পা এলে রাজু বলল , “ দিদিমণি , তুমি বিশ্বাস কর , আমি সেদিন নেশা করি নি । ”
টুম্পা বলল , “ আমি জানি । তবে তুই আর ঐ প্ল্যাটফর্মে ফিরে যাবি না । আমি ব্যবস্থা করেছি । কাল আমি তোকে সেখানে নিয়ে যাব । ওরা তোকে পড়াবে , হাতের কাজ শেখাবে । তারপর তুই একদিন নিজের কাজ শুরু করবি । আমি আর কোনো না শুনতে চাই না । ”
টুম্পা ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই , দুচোখের ছলছল করা জলে রাজুর দৃষ্টি অস্পষ্ট হল ।