
বিরু – আরে , রকেট কেন বানাবি? দোকানে সাউথ এর মাল এসেছে , হেভি উঁচুতে উঠে তারাবাজি হবে।
আমি – অরে না রে , সত্যিকারের রকেট , পৃথিবীর বাইরে যাবে।
বিরু – ভ্যাট বকিস না তো , সে অনেক বড়ো ব্যাপার। বুড়িমার চকলেট বোমা সস্তায় কিনবি কি ? একটা ঠেক পেয়েছি।
আমি – ভ্যাট না , সত্যি রকেট পাঠাবো চাঁদে , হাউই আর চাঁদে যাবার রকেট এক ব্যাপার রে , একটু যা বড়ো।
বিরু – কত বড়ো ?
আমি – (এবার প্রমাদ গুনলাম, মাপ তো নেই ) উম , মানুষ বা কুকুর চেপে গেলে অনেক টা বড়ো , শুধু রকেটটা গেলে ছোট হলেও চলবে।
বিরু – চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে থেকে বলে , তুই চাঁদে যাবি ? দাঁড়া কাকিমাকে বলছি , কেস খাবি এবার।
আমি – বিরু , বিরু, কথাটা শোন্ , কেউ যাবে না। তুই ভাব , আমাদের পাঠানো রকেটের গায়ে আমাদের নাম লেখা থাকবে। ভারতের পতাকা আঁকা থাকবে। পরে রাশিয়া বা আমেরিকা থেকে লোক চাঁদে গেলে আমাদের রকেট এবং নাম দেখতে পাবে।
বিরু এবার অনুপ্রাণিত হলো। ওর চকচকে চোখ সেই কথাই বললো। ও বেশ কিচুক্ষন ভেবে বললো — ঠিকানাটাও লিখে দিতে হবে।আমি আর বিরু লেগে পড়লাম পাড়ার বাকি বন্ধুদের অনুপ্রাণিত করার কাজে। চাঁদা তুলে রকেট বানাতে হবে। সবাইকে বুঝিয়ে বলতে হবে যাতে তারা বোমা পটকা না কিনে সেই টাকাটা এক জায়গায় জমা করে। অবনী কাকার বেনের দোকানে হাউইএর মশলা পাওয়া যেত। অবনী কাকা আমাদের কথা শুনে তৎক্ষণাৎ হয়ে গেলেন আমাদের মেন কেমিস্ট। কতটা লোহাচুর , সোরা , গন্ধক ইত্যাদি কি ভাবে মেশাতে হবে খাতায় লিখে নিলাম। আমাদের টিমে কথা হয়ে গেলো আমাদের এই সিক্রেট মিশনের কথা যেন কেউ জানতে না পারে। পাশের পাড়ার কালু, দিবা , কাঞ্চনরা জানলে সমস্যা হবে। আমরা চাইনা ওরা আমাদের মতো বা আমাদের আগে চাঁদে রকেট পাঠাক । দূর্গা পুজোয় কেনা নতুন জুতোর বাক্সের পিচবোর্ড জুড়ে রকেটের মতো দেখতে একটা বস্তুও তৈরী হলো। একটা মোটা পাইপ তার মাথাটা ছুঁচালো সাদা আর্ট পেপারে মোড়া। সমস্যা হলো চাঁদে যেতে গেলে অনেক্ষন ধরে আগুন বেরোবে। পিচবোর্ড পুড়েযাবে। আমার উর্বর মস্তিস্ক কাজ করলো। তিনটে চায়ের ভাঁড় জোগাড় করে তাতে ফুটো করে উল্টো করে রকেটের নিচে লাগানো হলো। রাশিয়ানদের রকেট গুলোতে তিনটে ফুটো দিয়ে আগুন বেরোয়। ওই তিনটে ভাঁড় থেকে তিনটে সলতে বের করা হলো। কালী পুজোর দিন সকালে রকেট ছাড়া হবে। রকেটের গায়ে ভারতের ম্যাপ , ম্যাপের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের লোকেশনটা লাল রঙের পুটকি দিয়ে বোঝানো আছে। ১১ জনের নাম ঠিকানা , স্কুলের রোল নম্বর লেখা আছে।
সমস্যা হলো কোন তিনজন রকেটে আগুন দেবে। বেশ কিছুক্ষন ঝগড়ার পর ঠিক হলো মুন্না বেশি পয়সা দিয়েছে তাই ও আগুন দেবে , আর বাকি দুজনকে টস করে বেছে নেওয়া হবে। প্রবল উত্তেজনা নিয়ে আমরা অপেক্ষায় আছি কখন সকাল ১০টা ১২ মিনিট হবে। পাড়ার ক্রিকেট মাঠে একটা সিমেন্টের পিচ আছে। ওখান থেকে রকেট ছাড়া হবে। রকেটের একটা পারফেক্ট সময়ে ছাড়তে হয়। এক মুঠো ধুলো নিয়ে ওপরে ছুড়ে দেখে নিলাম হওয়ার গতি কোন দিকে। তিনজন সকলের সঙ্গে হ্যান্ডসেক করে তিনটে দেশলাই নিয়ে এগোলো রকেটের দিকে। রকেটে আগুন দেওয়া হলো , প্রবল ধোঁয়া আর ভস ভস করে আওয়াজ হতে লাগলো। আমরা সবাই ছুটে দূরে সরে গেলাম। মিশন ফেল হলে রকেট বার্স্টও হতেপারে। এতো ধোঁয়ার কারণে কিছুই দেখতে পাচ্ছিলাম না। সবাই ওপর দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলাম কোথায় গেলো রকেট টা। আওয়াজ থেমে গেছে , ধোঁয়া কেটে গেলো। আমরা দেখলাম রকেট যেখানে দাঁড়িয়েছিল সেখানে দাঁড়িয়ে নেই ! রকেট টা কালো হয়ে সেখানে শুয়ে আছে !!!! ২ অথবা ৩ মিনিট নীরবতা। আমি বলার চেষ্টা করলাম রাশিয়া বা নাসাতেও মিশন ফেল হয়।
মুন্না হাতে একটা ইঁটের টুকরো তুলে নিয়ে বলে — নিকুচি করেছে তোর রাশিয়া আর নাসার। বাজি কেনার পয়সা ফেরত দে আগে।
মুন্নার দেখাদেখি অন্য সকলেও (বিরু আর টিঙ্কু বাদে ) পয়সা ফেরৎ
