রকেট

 img_3842এই যে সেদিন পুরোনো কবিতাটা মনে পড়েগেলো , “আই শ্যাল বি ব্যাক এগেইন জাস্ট বিসাইড দা প্যাডি স্টেয়ারস”। এটাও মনে পড়ে যায় যে, এটার সঙ্গে আমার চাঁদে রকেট পাঠানোর ও একটা সম্পর্ক ছিল। প্রফেসর শঙ্কুর মতো ডাইরীর ডেট উল্লেখ করে বলা সম্ভব নয়। কিন্তু এটা বলতে পারি , প্রায় ৩০ বছর আগের ঘটনা তো হবেই, বসে আঁকো প্রতিযোগিতা হয়েছিল কোনো এক দূর্গা পুজোর প্যান্ডেলে। হিজি বিজি ছবি এঁকে প্রথম পুরস্কার নিয়ে এলাম ঘরে। একটা বড়োসড়ো বই – মহাকাশে মহামিলন। রাশিয়ানরা তখন মুড়ি মুড়কির মতো রকেট, কুকুর যা পারছে তাই ছুড়ছে মহাকাশে। রঙিন ছবির সঙ্গে এ সব লেখা, সঙ্গে কিছু উদ্ভট শক্ত শক্ত লোকের নাম । ওদিকে ক্যাপ্টেন স্পোক দুটো বিদকুটে কান আর মাথায় বাটি ছাঁট চুল করে মহাকাশে পাক খাচ্ছে। রাশিয়ানদের কীর্তিকলাপ পড়ে আমিও মনে মনে মহাকাশচারী হয়ে উঠছিলাম। বিরু , হোৎকা , টিঙ্কু , মুন্না , সঞ্জয় , সুদীপ কে বুক ফুলিয়ে মহাকাশের গপ্পো (কিছুটা মন গড়া ) শুনিয়ে সে কি পরম তৃপ্তি! এই বই যে আমার জীবনের টার্নিং পয়েন্ট হবে সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত ছিলাম ।মনেমনে ঠিক করে ফেললাম কালী পুজোর দিন চাঁদে রকেট পাঠাতে হবে। কিন্তু এই রকেট তো একা পাঠানো যায় না , রাশিয়ানরা টীম ওয়ার্ক করে রকেট বানায়। পাকড়াও করলাম বিরুকে।আমি – বিরু ! রকেট বানাতে হবে একটা
বিরু – আরে , রকেট কেন বানাবি? দোকানে সাউথ এর মাল এসেছে , হেভি উঁচুতে উঠে তারাবাজি হবে।
আমি – অরে না রে , সত্যিকারের রকেট , পৃথিবীর বাইরে যাবে।
বিরু – ভ্যাট বকিস না তো , সে অনেক বড়ো ব্যাপার। বুড়িমার চকলেট বোমা সস্তায় কিনবি কি ? একটা ঠেক পেয়েছি।
আমি – ভ্যাট না , সত্যি রকেট পাঠাবো চাঁদে , হাউই আর চাঁদে যাবার রকেট এক ব্যাপার রে , একটু যা বড়ো।
বিরু – কত বড়ো ?
আমি – (এবার প্রমাদ গুনলাম, মাপ তো নেই ) উম , মানুষ বা কুকুর চেপে গেলে অনেক টা বড়ো , শুধু রকেটটা গেলে ছোট হলেও চলবে।
বিরু – চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে থেকে বলে , তুই চাঁদে যাবি ? দাঁড়া কাকিমাকে বলছি , কেস খাবি এবার।
আমি – বিরু , বিরু, কথাটা শোন্ , কেউ যাবে না। তুই ভাব , আমাদের পাঠানো রকেটের গায়ে আমাদের নাম লেখা থাকবে। ভারতের পতাকা আঁকা থাকবে। পরে রাশিয়া বা আমেরিকা থেকে লোক চাঁদে গেলে আমাদের রকেট এবং নাম দেখতে পাবে।
বিরু এবার অনুপ্রাণিত হলো। ওর চকচকে চোখ সেই কথাই বললো। ও বেশ কিচুক্ষন ভেবে বললো — ঠিকানাটাও লিখে দিতে হবে।আমি আর বিরু লেগে পড়লাম পাড়ার বাকি বন্ধুদের অনুপ্রাণিত করার কাজে। চাঁদা তুলে রকেট বানাতে হবে। সবাইকে বুঝিয়ে বলতে হবে যাতে তারা বোমা পটকা না কিনে সেই টাকাটা এক জায়গায় জমা করে। অবনী কাকার বেনের দোকানে হাউইএর মশলা পাওয়া যেত। অবনী কাকা আমাদের কথা শুনে তৎক্ষণাৎ হয়ে গেলেন আমাদের মেন কেমিস্ট। কতটা লোহাচুর , সোরা , গন্ধক ইত্যাদি কি ভাবে মেশাতে হবে খাতায় লিখে নিলাম। আমাদের টিমে কথা হয়ে গেলো আমাদের এই সিক্রেট মিশনের কথা যেন কেউ জানতে না পারে। পাশের পাড়ার কালু, দিবা , কাঞ্চনরা জানলে সমস্যা হবে। আমরা চাইনা ওরা আমাদের মতো বা আমাদের আগে চাঁদে রকেট পাঠাক । দূর্গা পুজোয় কেনা নতুন জুতোর বাক্সের পিচবোর্ড জুড়ে রকেটের মতো দেখতে একটা বস্তুও তৈরী হলো। একটা মোটা পাইপ তার মাথাটা ছুঁচালো সাদা আর্ট পেপারে মোড়া। সমস্যা হলো চাঁদে যেতে গেলে অনেক্ষন ধরে আগুন বেরোবে। পিচবোর্ড পুড়েযাবে। আমার উর্বর মস্তিস্ক কাজ করলো। তিনটে চায়ের ভাঁড় জোগাড় করে তাতে ফুটো করে উল্টো করে রকেটের নিচে লাগানো হলো। রাশিয়ানদের রকেট গুলোতে তিনটে ফুটো দিয়ে আগুন বেরোয়। ওই তিনটে ভাঁড় থেকে তিনটে সলতে বের করা হলো। কালী পুজোর দিন সকালে রকেট ছাড়া হবে। রকেটের গায়ে ভারতের ম্যাপ , ম্যাপের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের লোকেশনটা লাল রঙের পুটকি দিয়ে বোঝানো আছে। ১১ জনের নাম ঠিকানা , স্কুলের রোল নম্বর লেখা আছে।
সমস্যা হলো কোন তিনজন রকেটে আগুন দেবে। বেশ কিছুক্ষন ঝগড়ার পর ঠিক হলো মুন্না বেশি পয়সা দিয়েছে তাই ও আগুন দেবে , আর বাকি দুজনকে টস করে বেছে নেওয়া হবে। প্রবল উত্তেজনা নিয়ে আমরা অপেক্ষায় আছি কখন সকাল ১০টা ১২ মিনিট হবে। পাড়ার ক্রিকেট মাঠে একটা সিমেন্টের পিচ আছে। ওখান থেকে রকেট ছাড়া হবে। রকেটের একটা পারফেক্ট সময়ে ছাড়তে হয়। এক মুঠো ধুলো নিয়ে ওপরে ছুড়ে দেখে নিলাম হওয়ার গতি কোন দিকে। তিনজন সকলের সঙ্গে হ্যান্ডসেক করে তিনটে দেশলাই নিয়ে এগোলো রকেটের দিকে। রকেটে আগুন দেওয়া হলো , প্রবল ধোঁয়া আর ভস ভস করে আওয়াজ হতে লাগলো। আমরা সবাই ছুটে দূরে সরে গেলাম। মিশন ফেল হলে রকেট বার্স্টও হতেপারে। এতো ধোঁয়ার কারণে কিছুই দেখতে পাচ্ছিলাম না। সবাই ওপর দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলাম কোথায় গেলো রকেট টা। আওয়াজ থেমে গেছে , ধোঁয়া কেটে গেলো। আমরা দেখলাম রকেট যেখানে দাঁড়িয়েছিল সেখানে দাঁড়িয়ে নেই ! রকেট টা কালো হয়ে সেখানে শুয়ে আছে !!!! ২ অথবা ৩ মিনিট নীরবতা। আমি বলার চেষ্টা করলাম রাশিয়া বা নাসাতেও মিশন ফেল হয়।
মুন্না হাতে একটা ইঁটের টুকরো তুলে নিয়ে বলে — নিকুচি করেছে তোর রাশিয়া আর নাসার। বাজি কেনার পয়সা ফেরত দে আগে।
মুন্নার দেখাদেখি অন্য সকলেও (বিরু আর টিঙ্কু বাদে ) পয়সা ফেরৎ imagesচাইবার উপক্রম করলো। বুঝলাম আমার দলে লোক কম , অসম লড়াই এ জেতা সম্ভব না। অগত্যা দৌড়োনো ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। ফুল স্পীডে দৌড়ে স্বপনদের বাগানের ভেতর দিয়ে গিয়ে পাঁচিল টপকে বগা দা দের পুকুরের ঘাটের সিঁড়ি দিয়ে কয়েক ধাপ নেবে গিয়ে বসে হাঁপাতে হাঁপাতে ভাবলাম , এটাই কি কবি জীবনানন্দের ধান সিঁড়ি? সবাই আমাকে ভুল বুঝলো ? আচ্ছা আমি তো রকেট না বানিয়ে , ম্যারাথন রেসে নাম দিতে পারতাম …….. 

আলাদিনের জীন

আলাদিনের জীন

আলাদিনের প্রদীপের মধ্যে ঘুমিয়ে থাকা জীনটার মতোই কুঁড়ে এবং বেশির ভাগ সময় ঘুমিয়ে বা দিবা স্বপ্ন দেখে কাটাই। অভ্যাস বসত আমাকে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেবার কারণে মাঝে মধ্যেই ঘর ছাড়া হতে হয়। আমি ঝোলা কাঁধে নিয়ে একাই অনেক জায়গা ঘুরে বেড়াই। আমি সাহিত্য জানিনা তাই যা চোখে দেখি আর যে সব উদ্ভট চিন্তা মাথায় আসে সেগুলোই টুকলি মারি।

More Posts

Related posts

Leave a Comment