
কাদামাটি কে বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া তে মানে ল্যাবরেটরিতে কিছু মিশিয়ে বা টেস্ট টিউবের তলায় আগুন দেওয়ার পর দুম করে বার্স্ট করে অদ্ভুত ভাবে কি কফি তৈরী হতে পারে ? এমনটাই ভাবছিলাম ট্রায়াঙ্গুলার পার্কের লেদার ওয়ার্ল্ড দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখতে দেখতে। একটা ছোট্ট কাগজের টুকরো দেওয়ালে লাগানো , তাতে লেখা ” মাড ক্লে কফি এন্ড মোর “.রোববারের বৃষ্টি ঝরা দুপুরে চা বা কফি চলতেই পারে , এই ভেবে চামড়ার দোকানের পাশের ২ ফুট সরু গলিতে ঢুকে পড়লাম।ক্যাফে শব্দটা ফ্রেঞ্চ ভাষা
থেকে ইংরিজি তে ঢুকে পড়েছে বা অনেক সময় কেতাবাজি করে ইতালিয়ান বানান অনুযায়ী caffe ও লেখা হয় হয়তো। মোটামুটি ১৫৩০ সালে ডামাসকাসে প্রথম কফির দোকান খোলা হয়। তুর্কিশরা অবশ্য কফি কে কাহ্হাবে বলে। এই সব ভাবতে ভাবতে কাদা ক্যাফেতে ঢুকে পড়লাম। ভেবেছিলাম ঝাঁ চকচকে একটা কিছু হবে , কিন্তু দেখি চারিদিকে দেবব্রত বিশ্বাসের ছবি, সঙ্গে হালকা রবীন্দ্র সঙ্গীত। খুব একটা সাজগোজ নেই , মনে হল কারো বাড়িতেই ঢুকে পড়লাম।দোতলা ক্যাফে , একটা পুরোনো লাল সিমেন্টের সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় যাওয়া যায়। নিচের তলায় বসার জায়গা খালি নেই তাই দোতলাতে উঠে পড়লাম। মেঝেতে মাদুর বিছানো তার ওপর চেয়ার টেবিল , মেনু কার্ড এ লেখাটা চোখে আটকালো — পাঁঠার মাংসের ফুচকা !!!
এবার আমার বুক ফোলার পালা , হঠাৎ একটা উদ্ভট ক্যাফে আবিষ্কার করে ফেলেছি। যে ছেলেগুলো কাজ করছিলো তাদের একজনকে ধরে মালিকের কথা জানতে চাইলাম , আসলে কৌতুহলের সঙ্গে একগাদা প্রশ্ন মনে জমে উঠেছিল। উনি আধঘন্টা পর ক্যাফেতে ফেরার সঙ্গে সঙ্গে পাকড়াও করলাম , জানলাম উনিও আমার মতোই আড্ডাবাজ। অদ্ভুত ব্যাপার , উনি প্রচার বিমুখ তাই সেরকম কোনো সাইনবোর্ড লাগাননি , এই ক্যাফেটা খুঁজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব , এর কারণ উনি তার শখ চরিতার্থ করার জন্যই করেছেন। আর দেবব্রত বিশ্বাসের ছবির কারণ , উনি এই ঘর গুলোতেই ভাড়া থাকতেন। এক গাদা ইতিহাস জমে আছে কোনায় কোনায়। ক্যাফের মালিক ভদ্রলোক নিজে ভোজন রসিক , তাই কলকাতাকে উনি আসল খাবারের স্বাদ সত্যিকারের দামে (যেটা বেশ কম ) জানাতে চান , কত রকমের অদ্ভুত মানুষ হয় কে জানে। কাদা কথাটা ওনার মাথায় আসার কারণ , উনি মাটির তৈরী অদ্ভুত পাত্র সংগ্রহ করতে পছন্দ করেন এবং তাই দিয়ে ক্যাফেটা বেশ সুন্দর সাজিয়ে রেখেছেন। যাকগে , ওনার কথা মতো আসল ভেটকি মাছের ফ্রাই আর মাংসের ফুচকা, সঙ্গে দার্জিলিং চা খেয়ে বুঝলাম কথাটা ভুল বলেননি । অনেকে উইক এন্ড ট্যুরে অনেক দূরে কোথাও যান, আমার মনে হলো ট্যুর মানেই কি দূরে কোথাও ? নিজের শহরে নতুন কিছু খুঁজে পাওয়া কি ট্যুর নয় ?

আলাদিনের প্রদীপের মধ্যে ঘুমিয়ে থাকা জীনটার মতোই কুঁড়ে এবং বেশির ভাগ সময় ঘুমিয়ে বা দিবা স্বপ্ন দেখে কাটাই। অভ্যাস বসত আমাকে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেবার কারণে মাঝে মধ্যেই ঘর ছাড়া হতে হয়। আমি ঝোলা কাঁধে নিয়ে একাই অনেক জায়গা ঘুরে বেড়াই। আমি সাহিত্য জানিনা তাই যা চোখে দেখি আর যে সব উদ্ভট চিন্তা মাথায় আসে সেগুলোই টুকলি মারি।
More Posts