ক্যালাস কতরকমের হয় …… সুকুমার যে আজ আসবে না, মনেই ছিল না চান্দ্রেয়ীর। বোকার মত ভেবে বসে আছে বিয়ের গিফটটা ওকে দিয়েই কেনাবে। আজ কাজ করতে করতে ১২টা নাগাদ মনে পড়ল সেই কথা। সন্ধ্যেতে অফিস থেকে সবাই মজুমদারের বিয়ে তে যাবে, সেই গিফট কিনতে এখন নিজেকেই যেতে হবে….কি আর করা!
প্রনব স্যার কে বলে, ঘনশ্যামের গাড়িটা নিয়ে সোজা উল্টোডাঙার টাইটান শো-রুম। তাড়াতাড়ি না ফিরলে প্রচুর কথা শুনতে হবে……
গাড়ী থেকে নামার সময় ফোনটা বাজল; বুবুল।ফোন সাইলেন্ট করে, চান্দ্রেয়ী ভাবল, ঘড়িটা আগে কিনে নিই, ফেরার সময় ফোন করে নেব।
দোকানে ঢুকতে ঢুকতে আবার ফোন। একটা ম্যাসেজ পাঠিয়ে দিল চান্দ্রেয়ী- “আই উইল কল ইউ লেটার”। সাথে সাথে উত্তর-“ডিম্পু প্লীস ফোনটা ধর, খুব দরকার”।
এই আবদারটা অস্বীকার করা যায় না, সারা পৃথিবীতে এই নামে ওকে একজনই ডাকে। চান্দ্রেয়ী দোকানের সোফায় বসে কল ব্যাক করল।
– কি হয়েছে কি? কিসের এত ইমারজেন্সি?
-তুই কি খুব ব্যস্ত ছিলি?
-এখন এসব কথা বলে কি লাভ? বল … কি বলবি?
-আচ্ছা, সিক্সটি সিক্স পারসেন্ট আ্যটেন্ডান্স কি ভালো পারফরমেন্স না খারাপ?
-এটাই কি প্রশ্ন ?
-না, মানে , প্লিস বল, তুই তো আ্যডমিন সামলাস।
-কিসের আ্যটেন্ডান্স-এর কথা হচ্ছে সেটা না বললে বলি কেমন করে?
-মানে, একটা অনুষ্ঠানে আমার তিনদিন যাবার কথা ছিল , আমি দুদিন গেছি।
-অনুষ্ঠানটা কি ছিল ?
-আরে, যাই থাকুক না কেন, একদিন না গেলে কি এমন খারাপ বল তো?
-বুবুল, অনুষ্ঠানটা কি বল; হ্যাজাস না।
-ঐ আর্যার ভাই এর বিয়ে।
-মানে, তোর শালার বিয়ে!! তো তুই কোন্ দিন যাস নি শুনি?
-আমি আর্যাকে আগেই বলে দিয়েছিলাম, বেশী আলো, লোকজন আমার ভালো লাগে না, আর তাছাড়া দুজন বিয়ে করছে, লোক ডেকে খাইয়ে কি লাভ বলতো? সেই টাকাগুলো তো সেভ করলে কাজ হয়, কে বোঝাবে এদের এ সব কথা।
-বুবুল, তুই কোন্ দিন যাস নি?
-দ্যাখ ডিম্পু, বরকর্তা সেজে কিন্তু আমি বিয়ের দিন গিয়েছি, আসল কাজটা সেরে এসেছি।
-মানে, আমি যেটা ভাবছি, সেটা কি তবে ঠিক?
-কি ভাবছিস বল? বাঙালীদের বিয়ের দিনটাই আসল। সেইদিন আমি হাজির ছিলাম একদম ধুতি-পাঞ্জাবী পড়ে, এই নিয়ে কোনও কথা হবে না।
-তুই বউভাতে গিয়েছিলি?
-তোকে তো কতক্ষন ধরে জিজ্ঞেস করছি সিক্সটি সিক্স পারসেন্ট আ্যটেন্ডান্স কি ভালো পারফরমেন্স না খারাপ?
-কথা ঘোরাস না বুবুল, তুই কি বউভাতে গিয়েছিলি?
-না
-ইসসসশ! বেচারা আর্যা!! মেয়েটার বাবা নেই, একমাত্র ভাইএর বিয়ে, আর সেখানে ওদের বাড়ির অনুষ্ঠানে বাড়ির জামাই নেই ! তুই কি রে??
-আমি অনেক আগে থেকেই বলে রেখেছিলাম। আমার কথা না শুনলে আমি কি করব।
-আমি জাস্ট ভাবতে পারছি না….. তুই বউভাতে না গিয়ে কি করছিলি? সেদিন কি তোর শুধু লোকজন ভালো লাগে না বলেই যাস নি… না কি অন্য দরকারি কাজ ছিল?
-আরে, রবিবার ছিল, বাড়িতে ঘুমিয়েছি মন ভরে।
-উফ! আই আ্যাম ব্লেসড। আবার প্রমান হল, আমার সাথে যা হয়, ভালো হয়। ভাগ্যিস আমার তোর সাথে বিয়েটা হয় নি।
-তুই কিন্তু আমার প্রশ্নের জবাবটা দিলি না। বাড়ির অবস্থা ভয়ঙ্কর। আমার সাথে কেউ কথা বলছে না। নিজের বাড়িতে নিজেকেই আউটসাইডার মনে হচ্ছে।
-তোর সাতপুরুষের ভাগ্য ভালো এরপরও আর্যা তোকে ডিভোর্স করে নি। আচ্ছা, আমায় তুই বলতো, এবার তুই কি ভাবে কোন মুখে শ্বশুরবাড়ি যাবি?
-সে কোনও ব্যাপার না, আমি তারপরে গিয়েছি, গিয়ে খেয়েও এসেছি।
-কিছু বলার নেই রে, তুই পারিস বটে। আমায় তাহলে এভাবে ফোন করলি কেন?
-আমার সাপোর্টে ভেবেছিলাম তুই কিছু বলবি।
-বুবুল! হোয়াট ইস দিস? আমায় তুই কি ভাবিস বলতো? মানছি তোকে খুব ভালবাসি, তবে এই পাগলামিগুলোকে কিছুতেই মানা যায় না।
-ডিম্পু, সত্যি কথাটা শুনবি? মনটা খারাপ ছিল, তোর সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করছিল।
চান্দ্রেয়ী হেসে ফেলে। কিছু না-পাওয়া, অনেককিছু পাওয়ার থেকেও বড়।
-রাখ, পরে ফোন করব তোকে।
কব্জি ঘুরিয়ে ঘড়ি দেখে আঁতকে ওঠে; খুব দেরী হয়ে গেল, এবার ঝটপট কাজ সারতে হবে।